চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হবে নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে। যদিও এখনও পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। শুরুতে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হবে। র্যাম্প নির্মাণের পর আরও কয়েকটি পয়েন্ট যুক্ত করে মোট ১০টি বুথের মাধ্যমে টোল আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। তবে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও ভারী ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে কয়েক দফা কমিয়ে টোলের হার চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকেই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে। আপাতত সিডিএ টোল আদায় করবে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সিডিএ জানায়, গত ৩ নভেম্বর টোলের হার নির্ধারণ নিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২৭ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার চূড়ান্ত করে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলার ওঠা-নামার সুযোগ রাখা হয়নি।
নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলে অটোরিকশাকে টোল দিতে হবে ৩০ টাকা। প্রাইভেট কারকে ৮০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ টাকা ও কাভার্ড ভ্যান ৫০০ টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে জিইসি মোড় থেকে উঠে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নামার সুযোগ রয়েছে। আবার পতেঙ্গা থেকে উঠে নগরের টাইগারপাস, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নামার জন্য র্যাম্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিমতলায়, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডে ওঠানামার নয়টি র্যাম্প থাকবে।
এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, টোল আদায়ের সব প্রস্তুত সম্পন্ন। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নতুন বছরের শুরু থেকে টোল আদায় করা হবে। সরকারের কাছে আমরা টোল নিয়ে আপিল করেছিলাম। নতুন টোল আগের চেয়ে কমানো হয়েছে।
প্রকল্পের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির ব্যয় এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করা হয়।
তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু করেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছিলেন। গত আগস্টে পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরু করা হয়। এতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের (মূল উড়ালসড়ক থেকে ওঠানামার পথ) কাজ শেষ না হওয়ায় গাড়িগুলো নগরীর লালখান বাজার থেকে সরাসরি পতেঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াত করছিল। নগরীর লালখান বাজার থেকে গাড়ি ওঠার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এই প্রান্তে গাড়ি নামছে টাইগারপাসে। আর পতেঙ্গা প্রান্তে গাড়ি ওঠানামা করছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার অনুমোদন দেয়। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বোর্ড গঠন করা হলে আবারও টোল পুনঃবিবেচনার করে বোর্ড। আগের তুলনায় যানবাহন এবং ওঠানামা স্থানভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমিয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে।
ভোরের আকাশ/ সু