logo
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৮:১১
চাঁদপুরের মেঘনায়
জাহাজে সাত খুন: নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত, তদন্ত কমিটি গঠন
অনলাইন ডেস্ক

জাহাজে সাত খুন: নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত, তদন্ত কমিটি গঠন

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীতে সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিচয় নিশ্চিত করেছে নৌ-পুলিশ। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আব্দুস সবুর নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেন।

নিহতদের পরিচয়:
১. মো. সালাউদ্দিন (৪০), লোহাগড়া, নড়াইল।
২. আমিনুর মুন্সি (৪১), লোহাগড়া, নড়াইল।
৩. মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), ফরিদপুর।
৪. শেখ সবুজ (২৭), ফরিদপুর।
৫. মো. রানা, বাবুর্চি, ফরিদপুর।
৬. মো. মাজেদুল ইসলাম মজিব (১৮), মাগুরা।
৭. মো. সজিবুল ইসলাম (২৯), মাগুরা।

আহত একমাত্র ব্যক্তি জুয়েল (৩৫), ফরিদপুরের বাসিন্দা, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। শ্বাসনালী কাটা থাকায় তিনি কথা বলতে পারছেন না এবং কাগজে লিখে যোগাযোগ করছেন।
সোমবার বিকেলে হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাহাজ থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তদন্ত কার্যক্রম: শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সচিবকে সদস্য সচিব করে কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।

স্বজনদের হৃদয়বিদারক দৃশ্য: মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে লাশ নিতে ভিড় জমায় নিহতদের স্বজনেরা। ময়নাতদন্ত শেষে ছয়টি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাবুর্চি রানার লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন। নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত: নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে এটি ডাকাতি বলে মনে হলেও এখন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে তদন্ত চলছে। নিহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা কোনো লুটপাট করেনি, যা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

পটভূমি: জাহাজে নিয়মিত চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটার অভিযোগ এনেছেন স্থানীয়রা। নিহত মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার ভাগনে সাদিকুর রহমান জানান, চাঁদা না দিলে মারধরের শিকার হতে হয়। এটি চাঁদাবাজদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

বিক্ষোভ ও দাবি: মঙ্গলবার সকালে নিহত শ্রমিকদের হত্যার বিচার চেয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশন নেতা হারুন অর রশিদ সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।

এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর নৌ থানার ওসি একে এম এস মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

 

ভোরের আকাশ/রন