অনেক বছর ধরেই সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। আগে এই কার্যক্রম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। পরে তা কলেজ পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে অনেকের পক্ষেই শিক্ষাটা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই সরকার জানুয়ারির ১ তারিখে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছে। এই ঘটনা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রসংশিত হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সিলেবাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে সময় মতো শিক্ষার্থীরা বই পাবে কি না তা নিয়ে একটা দোটানা তৈরি হয়েছে। মুদ্রণ শিল্প সমিতি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। ফলে সময় মতো পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও কিছু বই নিয়ে এ অনিশ্চয়তা নেই।
প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। এতে সমর্থন জানিয়েছে মুদ্রণ মালিক সমিতি। গত রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই মুদ্রণ মালিক সমিতি পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আমাদের জানিয়েছে। অপরদিকে জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের অন্য পাঁচটি বই এবং জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের বাকি সব বই পৌঁছে দেওয়ার কথা হয়েছে। এ জন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেÑ আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। এর আগে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিষয়টি জানার পরও বাধা না দেওয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার উজ্জামান রুবেল এবং সমিতির প্যাডে চিঠিটি যাওয়ায় নিজের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন সমিতির সভাপতি রাব্বানী জাব্বারও।
রোববার সংবাদ সম্মেলন ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন মুদ্রণ সমিতির এই তিন নেতা। শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া চিঠিতে সমিতির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ লেখেন, ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বই জানুয়ারিতে সরবরাহের শর্ত রহিত করা এবং পুস্তক মুদ্রণের আগে আংশিক বিল পরিশোধেরও দাবি জানান তিনি।
চিঠির বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে পড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পরিস্থিতি সামাল দিতে এনসিটিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শে রাতে আবার শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি লেখেন মুদ্রণ সমিতির এই নেতা। তাতে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোয়’ ও ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ’ করায় জাতির কাছে ক্ষমা চান তিনি।
পরে রাতে সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিঠির প্রসঙ্গে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, আমাদের যে ছোট ছোট প্রেসগুলো রয়েছে, যারা একটি দুটি মেশিন নিয়ে কাজ করে। তাদের বক্তব্য ছিল, ৫ জানুয়ারির মধ্যে (বই সরবরাহ করতে) পারবো না। আপনি একটি চিঠি ইস্যু করেন। তখন আমি সেক্রেটারিকে (সমিতির সাধারণ সম্পাদক) বললামÑ সবাই বলছে দেখেন। পরে সেক্রেটারি একটি (চিঠির) ড্রাফট করে দিল, আমি সই করে দিলাম। মুদ্রণ শিল্প সমিতির প্যাডে ‘সময় চেয়ে’ এমন আবেদন করার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন সমিতির সভাপতি। তবে তিনিও বিষয়টির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার উজ্জামান রুবেল বলেন, আমি বলছিলাম, ছোট ছোট প্রেস মালিক আছে তারা চাচ্ছে মিনিস্ট্রিতে একটি আবেদন দিক। আমার এটা ভুল হয়েছে, আমি স্বীকার করছি। আমি উনারে (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) বলেছি, দিলে আপনি দেন। আমি দিতে পারবো না। এই কথা আমি বলেছি। আমি উনাকে মানা করিনি (চিঠি দিতে)। আমরা আপনাদের কথায় আস্থা রাখতে চাই। সময় মতো বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। কোনোভাবেই এটা নিয়ে ছেলেখেলা করা যাবে না।
ভোরের আকাশ/রন