logo
আপডেট : ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৩৮
সাহসীকতার জন্য বিজিবি’কে ধন্যবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাহসীকতার জন্য বিজিবি’কে ধন্যবাদ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মূলত একটি আধা-সামরিক বাহিনী। এর সদর দপ্তর ঢাকায় হলেও মূল দায়িত্ব সীমান্তে। সীমান্তে তারা অতন্ত্র প্রহরী। মানুষের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি ভূমি রক্ষা তাদের কাজ। দেশের এক বিন্দু জায়গা রক্ষায় তারা জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এ কারণে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তাদের গোলাগুলির অনেক নজির রয়েছে। দেশের ক্রান্তিকালে তারা অন্যান্য বাহিনীর মতোই দায়িত্ব পালন করে থাকে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই বাহিনী সীমান্তে তার শক্তি দেখাতে পারেনি। এ কারণে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্যাতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষ। অনেক স্থানে সীমান্তে বাংলাদেশিরা চাষাবাদ করতে পারেননি। ক্ষেতে গেলে তাদের গুলি করে মেরেছে বিএসএফ। কখনো কখনো তারা এদেশের মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে। এসব সত্ত্বেও বিজিবি তেমন প্রতিরোধ করে তুলতে পারেনি। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর বিজিবি তার সক্ষমতা দেখাতে শুরু করেছে।

বিজিবি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাটিলা সীমান্তে বিএসএফের দখলে থাকা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কোদলা নদীর অংশবিশেষ অবমুক্ত করে নিজেদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। গত সোমবার দুপুরে মাটিলা সীমান্তের কোদলা নদীর পাড়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় মহেশপুর-৫৮ বিজিবি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ৫৮-বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুস শহীদ। উপস্থিত ছিলেন ৫৮-বিজিবির নবাগত অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিক, মাটিলা ক্যাম্প কমান্ডার মোক্তার হোসেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুস শহীদ বলেন, ৫৮-বিজিবি মাটিলা সীমান্তের কোল ঘেঁষে কোদলা নদী বহমান। এই নদীর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। তবে এ যাবৎকাল বাংলাদেশের লোকজন নদীতে কোনোরকম কাজকর্ম করতে পারতেন না, মাছ ধরা কিংবা প্রয়োজনীয় কাজ করতে দিলে বাধা দেওয়া হতো। সম্প্রতি সময়ে বিএসএফ-এর সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে বিজিবির দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশের লোকজন নদীর সব কিছু ভোগ দখল করতে পারবে। সংবাদ সম্মেল শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় মাটিলা গ্রামের অনেকেই নদীতে মাছ ধরছে এবং অনেকেই গোসল করছে। কোদলা নদীতে বাংলাদেশের দখল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কৃষক আলমগীর বলেন, এখন থেকে নদীর ধারে নিয়মিত মাছ ধরা যাবে ও নিত্যদিনের কাজকর্ম করা যাবে। আগে বিএসএফ নদীতে নামতে দিত না।

কয়েকদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ ১১৯ মুক্তিযোদ্ধা সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে বিজিবির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং সাম্প্রতিককালে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবির ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিজিবির সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই সবার প্রত্যাশা। প্রধান উপদেষ্টার সেই কথার প্রতিফলন ঘটেছে বিজিবির কার্যক্রমে। তারা বিএসএফ’র হাত থেকে জমি উদ্ধার করেছে। এই সাহসী কাজের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

 

ভোরের আকাশ/রন