logo
আপডেট : ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১১:৪৫
শীতার্তদের ওষুধ ও খাবার দিতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতার্তদের ওষুধ ও খাবার দিতে হবে

শীত কারো জন্য বিলাসিতা; আবার কারো জন্য অভিশাপ। কিন্তু প্রকৃতি তো আর কারো জন্য আলাদা নিয়মে চলে না। তা-ই কার ভালো, আর কার মন্দ - তা বিবেচনার সুযোগ নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের ১০ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃত্যু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে শীতে কাঁপছে ওই জেলাগুলো। তীব্র শীত আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। বিশেষ করে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য। সেসব অঞ্চলে শীতও যেমন পড়ে প্রচণ্ড, তেমনি শীত নিবারণের বস্ত্র কম্বলও তাদের কম। একদিকে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে তাদের চলে আপ্রাণ লড়াই; অন্যদিকে শীতের সময় কর্মহীন হয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে বুধবার বিকেলের পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হিমেল বাতাস বইছে। কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। হাড়কাঁপানো শীতে, বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, কুলি ও কৃষি শ্রমিকরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। পাশাপাশি ছিন্নমূল, শ্রমজীবী ও নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ আরও কষ্টে আছেন। কাজ না পেয়ে সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় এসব খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। এক সময় শীতের হাত থেকে প্রান্তিক ও ভুক্তভোগী মানুষকে বাঁচাতে নানা সামাজিক ত্রাণ কর্মসূচি চালু ছিল। কম্বল, শীতের বস্ত্রসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তু, ওষুধপত্র-খাদ্য শীতার্ত মানুষের মাঝে বিলি করা হতো। এখন তা অনেক কমে গেছে। এ বছর এরকম উদ্যোগ কমই দেখা গেছে। গত বছর বন্যার সময়, বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের আকস্মিক বন্যার হাত থেকে বন্যার্তদের বাঁচাতে সারা দেশের মানুষের মধ্যে বিস্ময়কর সাড়া দেখা গিয়েছিল। শীতও যে বন্যার মতোই কিছু কিছু মানুষের জন্য এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় তা হয়তো অনেকের কাছে তেমনভাবে মনে হয় না। তা শীতের বেশ কিছু ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তীব্র শীতের সময় বেশিরভাগ মানুষই গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। ফলে দিন এনে দিন খান যেসব মানুষ তাদের কাজ কমে যায়। শীতের সময় এই দিকটাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়। শীতের বস্ত্র কম্বল পেলেও অনেকে খাবার পান না। পরিবার নিয়ে অভুক্ত থাকেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিভিন্ন জেলার শ্রমিক, রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষরা অনেকে কম্বল পেলেও খাদ্য সহায়তা পাননি। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নিবন্ধিত শ্রমিক আছেন দুই হাজারের মতো, আর জেলা সদরে তিন হাজার। এর বাইরে অনেক রিকশাচালক আছেন। উলিপুরের কোনো রিকশাচালক এখন পর্যন্ত একটা কম্বল বা কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি। শুধু জেলা শহরে ৪১ জনকে ১০ কেজি করে চাল ও ৪০ জনকে একটা করে কম্বল দিয়েছে। বর্তমান শীতের জন্য সিকিভাগ রিকশা পথে নেমেছে। মাঠে-ঘাটে কোথাও কাজ নেই।

সরকারের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতেও একই ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখেছি। এটা অবশ্য সময় সাপেক্ষ। কেননা, সরকারি কাজ বলে একটা কথা আছে না! অনেক সময় কম্বল বিতরণ করা হয় চৈত্র মাসে। এ নিয়ে হাস্যরসও কম হয় না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগ অবশ্য এগিয়ে থাকে। শীতের মধ্যেই তারা কম্বল বিতরণ করে থাকেন। আবার অনেকে তো কম্বল নিয়ে রাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। যেখানে ছিন্নমূল মানুষ, তারা সেখানে পৌঁছে যান। শীতার্ত মানুষটির গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে দিয়ে তারা তার মুখে হাঁসি ফোটানোর চেষ্টা করেন।

শীতার্ত মানুষকে রক্ষায় সরকারকে আরও বেশি সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের এই তীব্র শীত থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের গরম কাপড় দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যেরও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি অবস্থাসম্পন্ন মানুষের নিম্ন আয়ের মানুষের শীতের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা চাই, আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে এই সত্য অক্ষয় হয়ে থাকুক : মানুষ মানুষের জন্য।

 

ভোরের আকাশ/রন