logo
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১১:৩২
অপহরণ-চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না কেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক

অপহরণ-চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না কেন?

গণঅভ্যুত্থান মানুষের মনে অনেক আশা জাগিয়েছিল। এ দেশের মানুষ আশা করেছিল তারা একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবে। কিন্তু অবস্থা অনেকটা ছেঁড়া কাঁথার মতো, একদিকে ঢাকতে গেলে আরেকদিক দিয়ে গা উদোম হয়ে যায়। এমনিতেই গ্যাস সংকট-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাগরিক জীবন যখন অস্থির তখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণ-চাঁদাবাজির আতঙ্ক। তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদার জন্য প্রকাশ্যে কোপানোর মতো ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ বলছে, অপহরণ-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ৮ থেকে ১০ দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী ‘ইমন গ্রুপ’ জড়িত বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্টের পর অপহরণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো যেসব অপরাধ এখন বেশি ঘটছে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পেশাদার অপরাধী। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও পেশাদার অপরাধীরা সক্রিয়। পেশাদার অপরাধী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকেও আলোচনা হচ্ছে। ডিএমপি সূত্র বলছে, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, মতিঝিল, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে।

পুলিশ অনেক সন্ত্রাসী গ্রুপের নাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করছে। পুলিশ বলছে- এরা গত দুই দশক ধরেই অপরাধ জগতের আলোচিত নাম। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় কেন আনা হচ্ছে না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে পেশাদার অপরাধীরা তৎপর হয়েছে। অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্রিয়তা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে তার নজির সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচ মাস হয়ে গেলেও পুলিশ এখনো সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেনি। কারণ রাজনৈতিক সরকার না থাকায় তারা এখনো বুঝতে পারছে না পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? বিপদ এড়াতে তারা অনেক দায়িত্বই এড়িয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সারা দেশে পুলিশের ৫ হাজার ৭৪৯টি অস্ত্র লুট হয়েছে বা হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় পুলিশের অস্ত্র লুট হয়েছে বা হারিয়েছে ১ হাজার ৮৯৮টি। উদ্ধার হয়েছে দেড় হাজারের মতো। এ অবস্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় পুলিশকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও যানবাহনের অভাবে টহল ও তল্লাশি কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে এবং পুলিশের লুট করা অস্ত্র দিয়েও ছিনতাই, চাঁদাবাজি চলছে এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক এলাকায় এখন মানুষজন সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরুতেও ভয় পায়। অনেক জায়গায়ই স্বাভাবিক লোক চলাচল কমে গেছে। জনমনে এক প্রবল আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই আতঙ্ক-উদ্বেগ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক, তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা ছাড়া কোনোভাবেই সমাজ থেকে এই অপরাধ কমবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ব্যাপারে অবশ্যই আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। এমন অপহরণ-চাঁদাবাজি থাকলে সরকারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে; এবং চলমান এই অরাজকতার জন্য মূলত দায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা। এই দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

 

ভোরের আকাশ/রন