logo
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ২০:০১
বরিশালে
৫ম জাতীয় যুব কনভেনশন
বরিশাল ব্যুরো

৫ম জাতীয় যুব কনভেনশন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ইসলামী নীতি আদর্শের মাধ্যমেই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি। আগামী নির্বাচনে ইসলামী নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য ইসলামের পক্ষে যুবকদেরকে নিয়ে আসতে মাসে কমপক্ষে ৪ জনকে দাওয়াত দিতে হবে। ৫৩ বছরে যারা শাসন করেছে তারা নতুন করে কোনো আশা দেখাতে পারবে না। এখন তাদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বাতিলকে পরাজিত করতে হবে। মা য়ের কোল খালি করা আর বিদেশে টাকা পাচার করে বেগম পাড়া তৈরির রাজনীতি দেশের মানুষ চায় না।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এ সরকার নয়। তারা গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের দুর্বলতা কোথায়? পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হতে বাঁধা কোথায়? চাঁদাবাজ ও খুনীদেরকে এদেশের মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যারা অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে তাদেরকে যারা নির্বাচনে আহবান করে তারা জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। তাদের ধোঁকাবাজি জনগণ বুঝতে পারছে। অন্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠনে কেউ ভয় পায় কেন? উচ্চ কক্ষ হোক আর নিন্মকক্ষ হোক সব নির্বাচন পিআর পদ্ধতির হতে হবে।

তিনি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মারুফ শেখ কে সহ-সভাপতি ও মাওলানা মানছুর আহমদ সাকী কে সেক্রেটারি জেনারেল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী মানসুর আহমাদ সাকী, প্রকৌশলী মারুফ শেখ ও মাওলানা রহমাতুল্লাহ বিন হাবিব এর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় যুব কনভেনশন এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। সম্মেলন ঘোষণা পত্র পাঠ করেন, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশে সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।

বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মোকামিয়ার পীর সাহেব মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবদুল খায়ের ও কে এম আতিকুর রহমান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ৫৩ বছরের লুটপাটে দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। ইসলাম ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আলেম ওলামাদের কে বিভক্ত করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদীরা ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এখন মুসলমানদেরকে নিয়ে আজান দেয়ানো শুরু হয়েছে। তাদের উপর আল্লাহর গজব পতিত হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, যুবক জাগ্রত হলে দেশ ও জাতি ভালো হয়। রুহানিয়াত ও জেহাদের সমন্বিত প্রয়াস। কোন ভাবেই রুহানিয়াতকে ভূলে যাও যাবে না বা বাদ দেয়া যাবে না। সাহাবাদের অনুসরণ ইসলামী যুব আন্দোলন। সাহাবাদের জন্য ত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে ভালোবাসতে হবে। সাহাবাদেরকে যারা সমালোচনা করবে তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। কৌশলের নামে সুন্নতকে বাদ দেয়া যাবে না। ঈমানকে মজবুত করতে পারলে জয় আসবে। জিকির ও ফিকিরে থাকতে হবে। রুহানিয়াতকে বাদ দিয়ে কোন জিহাদ আমরা চাইনা। রুহানিয়াত ছাড়া জেহাদ হয় না এটা হবে সন্ত্রাস। আমাদের ইসলামী হুকুমত কায়েম করে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অতীতের সরকার সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই ধ্বংসস্তূপের উপরে কিছু হতে পারে না। যে কারণে সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আমরা চাই। কারো ইঙ্গিতে বিচার বিভাগ থাকতে হবে।

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে ৫০৫ টি আসন রাখা হয়েছে। আমি মহিলাদের জন্য ১০০ সংরক্ষিত আসন চাই না। মহিলাদের জন্য কোন নির্দিষ্ট আসন চাই না। এক কক্ষ বা দ্বি-কক্ষ যাই হোক সকল নির্বাচন পিআর পদ্ধতির হতে হবে। অন্যথায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মাঠে ছিলো অথচ অন্য দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মাঠে ছিলো না। বিএনপি নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলে ছাত্র জনতার অর্জনকে ধ্বংস করতে চাইছে। বাংলাদেশের মানুষ চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দেখতে চায় না। যারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাঁদেরকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম এখন চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। ইসলামী হুকুমত কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক থাকতে হবে। ইসলাম দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তাদের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ৫৩ বছরে ফ্যাসিস্টের উত্থান ও পতন হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ছাড়া জনমতের কোন প্রতিফলন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা দ্বি-কক্ষ চাইনা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই। আগামীদিনে কল্যাণ রাষ্ট্র করতে চাইলে পিআর পদ্ধতি দিন। অন্যথায় আন্দোলন করে পিআর পদ্ধতি ছাত্র জনতা আদায় করবে।

মোকামিয়ার পীর সাহেব মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস বলেন, ইসলাম এসেছে আওলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাধ্যমে। সকল পীর মাশায়েখদেরকে পীর সাহেব চরমোনাই'র নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের কোথায় কোথায় ফ্যাসিস্টদের সহযোগী আছে তাদের তালিকা হওয়া দরকার। পিআর বাস্তবায়ন হওয়ার পরে নির্বাচন হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকেই জুলাই বিপ্লবের একটি ঘোষণাপত্র ঠিক করতে হবে। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা ছিলো তাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবে। বিগত দিনে যারা ৩/৪ বার ক্ষমতায় ছিলো তারা অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তাদের অতীত চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। তারা উপর থেকে যে কথা বলেন তাদের কথা তৃণমূলে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা অপরিকল্পিত রাষ্ট্র পরিচালনা করে না। আশাকরি আপনারা জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। ইসলামী দলের নেতারা আগামী দিনে যাতে দুর্নীতিবাজদের সহযোগী না হন সে জন্য অনুরোধ করছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে সুন্দর সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে শোষণ করেছে। নব্য চাঁদাবাজ ও দখলদাররা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পথে যাবে।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ১৬ বছর আলেম ওলামাদের উপর জুলুম করা হয়েছিল। অনেককে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। জুলাই বিপ্লবে আপনাদের যে ত্যাগ ছিলো তা জাতি চিরদিন স্বরণ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন বলেন, ১৯ জুলাই ২০২৪ ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করেছে। সে থেকে আমরা ফ্যাসিস্টদের উৎখাত করে ঘরে ফিরেছি। তিনি যুব নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্র ভিত্তিক শক্তিবৃদ্ধির আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচনে আমার ভোট কেউ ছিনতাই করতে চায় তবে দেশের যুব সমাজ তাদের চোখ তুলে দিবে।

 

ভোরের আকাশ/রন