ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, অতীতের রাষ্ট্র পরিচালকরা উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরেও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, সব উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। ৫৩ বছরের রাষ্ট্র পরিচালকেরা দুর্নীতি করে নিজেদের সম্পদশালী করেছেন, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছেন।
পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, শিক্ষকরা আদর্শ নাগরিক গড়ার কারিগর। এই মানুষ গড়ার কারিগরদের ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম কাজ করছে। তিনি দাবি জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে প্রত্যেক মুসলিম সন্তান দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা জাতিকে সুন্দর একটি দেশ উপহার দিতে চাই এবং এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।
২০২৩-২৪ সেশনের কমিটি বিলুপ্ত করে পীর সাহেব চরমোনাই অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খানকে সভাপতি, মাওলানা এ বি এম জাকারিয়াকে সহ-সভাপতি এবং প্রভাষক আবদুস সবুরকে সেক্রেটারি জেনারেল করে ২০২৫-২০২৬ সেশনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
আজ ১৮ জানুয়ারি, সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ২০২৫-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারা
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান এর সভাপতিত্বে সেক্রেটারি জেনারেল প্রভাষক আবদুস সবুরের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫/১৬ বছরে স্কুল, কলেজ থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দিয়েছে, যা ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হয়েছে। তিনি বলেন, কুরআনী শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ৯০% শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তাদের অধিকাংশই ইসলামী শিক্ষা থেকে অনেক দূরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ডঃ আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, শিক্ষকদের থেকে ছাত্রদের আমানত, আদালত এবং আদর্শ শিখতে হবে।
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের ১৫ দফা দাবি
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সম্মেলন'২৫ থেকে শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়:
১. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।
২. শিক্ষা খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫% বরাদ্দ।
৩. শিক্ষক ও কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা প্রদান।
৪. শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৫. মাদরাসা কারিকুলাম থেকে অনৈসলামিক বিষয় পরিহার।
৬. দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের শাস্তি।
৭. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ।
৮. পাঠ্যবই থেকে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ও আপত্তিকর ভাষা পরিহার।
৯. মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত।
১০. পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের নাম অন্তর্ভুক্ত।
১১. শিক্ষা কারিকুলামে এনজিও ফান্ডিং বন্ধ।
১২. সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি।
১৩. নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পিআর সিস্টেম চালু।
১৪. নৈতিক অবক্ষয় রোধে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
১৫. শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন।
ভোরের আকাশ/রন