বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন। তবে আজ (সোমবার) সেই আবেদনের ওপর শুনানির কথা থাকলেও, আদালতের কার্যতালিকায় না থাকায় শেষ পর্যন্ত শুনানি হচ্ছে না। সিরিয়াল অনুযায়ী যেদিন আসবে, সেদিনই শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিন্ময় ব্রহ্মচারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়। এর আগে রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন করেন। গত ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় বলেন, ‘আজ (সোমবার) চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি হাইকোর্টের কার্যতালিকার সিরিয়ালে পেছানো ছিল। তবে গত সপ্তাহে আদালতকে ম্যানশন করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এ সপ্তাহে ম্যানশন করতে। আজ আমিসহ আরও অনেক সিনিয়র আইনজীবী আদালতকে বিষয়টি ম্যানশনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আদালত বলেছেন, যেহেতু এটা সেনসিটিভ মামলা, তাই নিয়ম অনুযায়ী সিরিয়াল যেদিন আসবে, সেদিনই শুনানি হবে।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। এ ঘটনায় ১ নভেম্বর তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- অজয় দত্ত (৩৪), লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ (৩৮), কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে (৩৮), তুষার চক্রবর্তী (২৮), মিথুন দে (৩৫), রূপণ ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮), হৃদয় দাস (২৫)। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এরপর গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পরদিন ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়। এদিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে ৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত শুনানির দিনে ধার্য করা হয়। ওইদিন তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় পরবর্তী ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ওই দিনই কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
পরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ জামিন আবেদনের শুনানি করতে আবেদন করেন গত ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার কাছে ওকালতনামা না থাকায় সেদিনও শুনানি হয়নি।