স্মার্টফোন মানেই এখন অনলাইন জুয়া, যা নাজিরপুরের হাজারো মানুষের জন্য সর্বস্বান্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল যুগে মানুষ সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছে, তবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, টেলিগ্রাম, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি যেমন মানুষের জীবনে সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনি Betway, 1xBet, khelstake এর মতো অনলাইন জুয়া প্ল্যাটফর্মও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রলোভিত করছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ অনলাইনে জুয়ায় ঝুঁকে পড়ছে। ডিজিটাল সুবিধার পাশাপাশি অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং অনলাইন জুয়া ক্যাসিনো বা সাধারণ জুয়া খেলার চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর। প্রযুক্তির মাধ্যমে যেখানে মানুষ যেকোনো স্থান থেকে জুয়া খেলতে পারে, সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার লেনদেন হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মানুষসহ অপরাধীরা জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী এই অনলাইন বাজির মরণ খেলায় জড়িয়ে পড়ছে। কিছু শিক্ষার্থী তো সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে। এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে।
সম্প্রতি, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নের পদ্মডুবী গ্রামে অনলাইন জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এক মারামারির ঘটনা ঘটে। ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার নাজিরপুর থানায় হাইউল হাওলাদার (২৩) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে একই এলাকার মন্টু হাওলাদার, মো. মনির হাওলাদার, মিজান হাওলাদার এবং সাইফুল হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত জুয়াড়ী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মোবাইলের মাধ্যমে চায়ের দোকানে বসে অনলাইনে জুয়া খেলে আসছিল। হাইউল বিষয়টি তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে এবং তাদেরকে বারবার জুয়া খেলা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চক্রটি কৌশল অবলম্বন করে তাকে ডেকে এনে মারধর করে এবং রক্তাক্ত জখম করে। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে নাজিরপুর বৈঠাকাটা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) রাধে শ্যাম জানান, বিষয়টি তার জানা আছে, থানায় অভিযোগ হয়েছে, এবং তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ওই জুয়াড়ী চক্রের মন্টু হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমি এর সঙ্গে জড়িত নই, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
অন্তত, এক শিক্ষার্থীর বড় ভাই জানালেন, “আমার ছোট ভাই বন্ধুদের আড্ডায় পড়ে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে সে লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে পড়েছে এবং প্রায় ২ লাখ টাকার মতো নষ্ট করে ফেলেছে। বর্তমানে সে জুয়া খেলা থেকে বিরত রয়েছে। আমি আশাকরি প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই জুয়া চক্র চিহ্নিত করে বন্ধ করবে।”