ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে পাখি, কিছু পাখি দলবেঁধে ছুটছে, কেউ আবার মাথা নুইয়ে গোসল করছে। চারদিকে কিচিরমিচির শব্দ, এ যেন চোখ জুড়ানো অপরূপ দৃশ্য। প্রতি বছরের মতো এ বছরও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ফেনী জেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বাশুড়া গ্রামের জোড়া দীঘির আশপাশ এলাকা।
জানা যায়, হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শীতল দেশ থেকে শীতের সময়, যখন ঠান্ডা হাওয়া শুরু হয়, তখন এই দীঘিতে অতিথি পাখি বা বাঁলি হাঁসগুলো আসতে শুরু করে। এটি যেন একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই অতিথি পাখিরা দূরদূরান্ত থেকে চলে আসেন এবং শীতকালটি এখানে কাটিয়ে আবার চলে যান। তাদের উপস্থিতি প্রাকৃতিকভাবে এলাকার পরিবেশে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
অতিথি পাখিদের উপস্থিতি শুধু স্থানীয়দের জন্যই আনন্দের নয়, দূরদূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীও পাখিদের দেখতে এখানে আসেন। তাদের কিচিরমিচির শব্দ, উড়ন্ত পাখির ঝাঁক আর বিচরণ দেখে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার হারাধন পাল বলেন, শীতকালে বাশুড়া দীঘিতে এসব পাখি আসতে শুরু করে যা আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি। প্রতি বছর তারা এখানে অবস্থান করে এবং ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। তাদের উপস্থিতি গ্রামকে এক অন্যরকম সৌন্দর্য প্রদান করে, যা এখানে বসবাসরতদের জন্য আনন্দদায়ক দৃশ্য। এই পাখির দল দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন প্রকৃতিকে আরও কাছ থেকে উপভোগ করেন।
শীতকাল এলেই অতিথি পাখিদের আগমন শুরু হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দেন। প্রায় সাড়ে আট একর আয়তনের এই দীঘির ওপরে পাখিরা অবাধে বিচরণ করে।
গ্রামের অরণ্য দাস নামের এক যুবক জানান, পাখিদের নিরাপত্তা সম্পর্কে এখানকার মানুষ খুব সজাগ। দর্শনার্থীদের পাখিদের বিরক্ত না করতে সচেতন করা হয়।
একসময় ফুলগাজী সরকারি কলেজের দীঘিতে এসব অতিথি পাখির বিচরণ ছিল। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যে পরিণত হতো। সেই দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করতেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ দীঘিটি বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষের জন্য লিজ দিলে পাখিদের আবাসস্থল ভেঙে যায়। বর্তমানে এসব পরিযায়ী পাখি সরকারি কলেজের পশ্চিম পাশের এই দীঘিতে বিচরণ করতে দেখা যায়।