logo
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১০:৫০
হরতাল ডাকল আ.লীগ
সিরাজুল ইসলাম

হরতাল ডাকল আ.লীগ

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় ছয় মাস পর মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ ও ‘অপশাসন-নির্যাতন’র প্রতিবাদে ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকেছে দলটি। গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিকে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এছাড়া কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বিচার শেষ হওয়ার আগে এবং ক্ষমা না চাইলে আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। গতকাল বুধবার তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারপত্র বিলি; ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ; ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ; ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধেরও দাবি জানানো হয়। এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি। তবে, বিজ্ঞপ্তিতে দলটির সংশ্লিষ্ট কোনো নেতা-কর্মীর স্বাক্ষর ছিল না।

যা বলছেন সমন্বয়করা : সরকার পতন ও এত মানুষ হত্যার পর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এত মানুষ হত্যা করার পরও শেখ হাসিনা কিভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করেন? যে দেশে এত হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, সেখানে এলে তো ফাঁসির মঞ্চে ঝুলতে হবে। গতকাল বুধবার সকালে কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক প্রদর্শনী পরিদর্শন করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। তরুণদের চিন্তা-ভাবনাকে রাজনীতিবিদরা হুমকি মনে করে বলে মন্তব্য করে সারজসি আলম বলেন, সো কোল্ড পলিটিশিয়ানরা এই জেনারেশনকে তাদের জন্য থ্রেট মনে করছেন। কারণ ইয়াং জেনারেশনের কালচারের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারছেন না, মানসিকতার সঙ্গে মিল রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে একটা বড় জেনারেশন গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। আমরা যেভাবে চাই সেভাবে তথাকথিত রাজনীতিবিদরা ভাবছেন না। কে মানুষের জন্য ভালো বা কে দেশের জন্য ভালো তারা এটা ভাবেন না। তারা ভাবেন, যাকে বসাচ্ছি সে আমার ম্যান কি না, যাকে বসাচ্ছি সে আমার স্বার্থ সার্ভ করবে কি না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, কর্মসূচি পালনের নামে আওয়ামী লীগ মাঠে নামার চেষ্টা করলে সেটি প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, তারা যদি আবার এখানে এসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার চেষ্টা করে, তাহলে এদেশের মানুষই তাদের প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে সেই পাঁচই আগস্টে। সুতরাং তারা রাস্তায় নামলে এদের মানুষই পিটিয়ে তাদের রাস্তাছাড়া করবে। এজন্য আলাদা কর্মসূচি ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না।

কঠোর অবস্থানে সরকার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের টপ লিডারশিপ জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টের ১৭ তম পাতায় আছে, শেখ হাসিনা নিজেই সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন গুম ও কিলিংয়ের। তারা অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে এ তথ্য জানিয়েছে। তিনি বলেন, এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে। আপনার আমার চোখের সামনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো। শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তারা আবার বলছে, তিন হাজার পুলিশ মারা গেছে। কত বড় জালিয়াতি, মিথ্যা কথা। তিনি বলেন, বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং ক্ষমা না চাইলে আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে দলটির কোনো সক্রিয় কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। দলের প্রধান নেতা-কর্মীর বেশিরভাগই দেশের বাইরে আছেন, কেউ পলাতক রয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন নেতা একাধিক মামলায় আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। দলের কয়েকজন নেতাকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিবৃতি দিতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন আর দলের কোনো নেতৃত্ব বা কার্যক্রম স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। এমনকি ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনসহ একাধিক মামলা করা হয়েছে। চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তার প্রত্যর্পণের জন্য গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।