কয়েক মাস ধরেই ঢাকার রাস্তায় বেড়েছে আন্দোলনের চাপ। বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন হঠাৎ রাস্তায় নেমে আসছে। এগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে সড়ক অবরোধ করে। ফলে মানুষের যাতায়াতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। অনেকে আবার হাস্যরসও করেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই জনগণ ও সরকারকে জিম্মি করে আন্দোলন-সংগ্রাম করে নানা দাবি-দাওয়া আদায় করতে তৎপর কতিপয় গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিছু হলেই তারা রাজপথে নেমে আসেন। আন্দোলন-সংগ্রামের মোক্ষম জায়গা রাজপথ বটেই; কিন্তু দিনের পর দিন যদি লাগাতার আন্দোলন চলতেই থাকে, যৌক্তিক-অযৌক্তিক যে কোনো দাবিতে যদি যে কেউ রাজপথ দখল করে নেয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হয় তা কি ভাবে কেউ? এমনিতেই রাজধানী ঢাকা একটি ব্যস্ততম শহর, এর মধ্যে যদি দিনের পর দিন রাজপথ চলে যায় আন্দোলনকারীদের দখলে তাহলে কীভাবে সেখানে স্বাভাবিক চলাচল সম্ভব?
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যেন বয়ে যাচ্ছে দাবি-দাওয়ার নহর। হুটহাট সড়ক-মহাসড়কে নেমে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে যান চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার শঙ্কা নিয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আন্দোলনের সামনে পড়লেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সীমাহীন বিপত্তির পাশাপাশি দিনের পরিকল্পনায় লেগে যাচ্ছে ভজকট। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক, নির্দিষ্ট গন্তব্যের গাড়ি রাস্তায় চলছে কিনা, তা নগরবাসীকে ৯৯৯-এ ফোন করে জেনে নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারিতেই নানা দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ ১১ বার অবরোধের মুখে পড়েছে। এছাড়া গেল ২৮ দিনে শুধু ঢাকায়ই দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভের মতো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এছাড়া শতাধিক আন্দোলন হয়েছে রাজপথে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কেউ কেউ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এটি কাম্য নয়। এমন কৌশল আগেও দেখা গেছে। দাবি-দাওয়ার মধ্য দিয়ে কেউ হীন স্বার্থ হাসিল করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বর্তমানে আমাদের দেশে যেহেতু কোনো নির্বাচিত সরকার নেই, এই সুযোগে আন্দোলনকারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি-দাওয়া পেশ করছে। অনেক দাবি পূরণও হচ্ছে। কিন্তু যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি এভাবে একের পর এক দাবি-দাওয়া নিয়ে আসতে থাকে তাহলে সরকারই-বা কী করবে? সরকার দাবি পূরণ না করার আগ পর্যন্ত তারা রাজপথ দখল করে বসে থাকবে এটাই বা কেমন কথা?
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্র থাকলে সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি-দাওয়া থাকবেই। গণতান্ত্রিক দেশে এটাকে প্রতিহত করা যায় না। নানা দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য, সম্মেলন আয়োজনের জন্য এক সময় ঢাকায় বড় বড় তিনটি ময়দান ছিল- পুরানা পল্টন ময়দান, আর্মানিটোলা ময়দান ও রেসকোর্স ময়দান। পাকিস্তান আমলেও এই তিনটি ময়দানেই বেশিরভাগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর্মানিটোলা ময়দান এখন শহরের এক কোণায় পড়ে গেছে, পল্টন ময়দানও আর আগের মতো নেই; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ থাকে। আন্দোলনকারীদের তাই বাধ্য হয়েই রাজপথেই জড়ো হতে হয়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে এ শহর অচল হয়ে যাবে। এ জন্য সরকারকেও যেমন বিকল্প উপায় বের করতে হবে, আন্দোলনকারীদেরও জনগণের কথা ভাবতে হবে। জনগণ যদি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যায় তাহলে হীতে বিপরীত হবে। সব দাবি-দাওয়াই রাজপথে নেমে জানাতে হবে তাও নয়। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি পালন না করতে আমরা অনুরোধ করব। কারও দাবি-দাওয়া থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জানাতে পারেন।