মানব স্বাস্থ্যের উপর ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ফুডগ্রেডবিহীন অনিরাপদ ড্রামের ব্যবহার বন্ধ করণের লক্ষ্যে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ কাঞ্চন-১ এ জেলা অ্যাডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মাদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ব্যাটার বাংলাদেশ গড়তে সবার দায় আছে। সকলকে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কেন ক্ষতিকর ভোগ্যপন্য, অনিরাপদ ড্রামের খোলা তেল ক্রয় করছি। ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কী দিচ্ছে, আমরা কী খাচ্ছি! সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শুধু আইনপ্রয়োগই একমাত্র সমাধান নয়। গণতান্ত্রীক সমাজ ব্যবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতা, সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে, জনমত গঠন করতে হবে। তবেই একটি সুস্থ্য বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সুন্দর বাজার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মনে রাখবেন ক্রেতারা যদি চমৎকার মানসম্মত পণ্য পায় তবেই প্রকৃত ব্যবসার যে মূল আকাঙ্খা এবং ব্যবসার যে আনন্দ তা উপভোগ করা যাবে। নৈতিকতার জায়গা থেকে সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে গুড গভর্নেন্সের জন্য কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে নির্দেশনামূলক বক্তব্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেসি কনসালটেন্ট মুশতাক হাসান মুহা.ইফতিখার খান বলেন, বর্তমানে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের ড্রামগুলো কেবলমাত্র রাসায়নিক দ্রব্য বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। যা ফুডগ্রেডবিহীন। এগুলোতে ভোজ্য তেল পরিবহন ও বাজার জাত করা হলে মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে। ড্রামের খোলা তেল আলোতে উন্মুক্ত থাকার ফলে ভোজ্যতেলের ভিটামিন ‘এ’ র গঠন পরিবর্তন করে এবং ভিটামিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ড্রামে কোন তথ্যই দেয়া থাকে না। এ জন্য সরকার খোলা তেল বিক্রয় এবং এ ধরণের ড্রাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরেও এই ড্রামগুলোতে ভোজ্যতেল পরিবহন ও বাজারজাত হচ্ছে। তিনি বলেন, যে কোন দেশে আইন করলে তা বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু এখানে তা হচ্ছে না। ভোক্তা তার রাইটস প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না, কার কাছে যাবে। আমরা পলিসি লেভেলে কাজ করছি এবং মাঠ পর্যায়ে জনমত ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি।
গত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলকে নিরুৎসাহিত করতে জন সচেতনতামূলক এই কর্মশালায় জাতীয় ভোক্তা-অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. রীনা রাণী পাল, ভোক্তা অধিদপ্তরের বিধি ও কার্যক্রম উপস্থাপন করেন রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম। আলোচনা পর্বে বক্তব্য প্রদান করেন জেলা ক্যাবের সভাপতি শাহ-ই-মবিন জিননাহ, চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী, অতিরিক্ত সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আনোয়ার হোসেন, সু শাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উপদেষ্টা ক্যাব সদস্য ডা. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ, জিয়া পরিষদ ও জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর জেলা আমীর মো. আনিসুর রহমান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মো. সাদাকাত আলী খান, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. নুরুল হুদা দুলাল, ক্যাবের নির্বাহী সদস্য ডা. চৌধুরী মোসাদ্দেকুল ইয়াজদানী, মাসউদ রানা, ভোক্তা অধিদপ্তর দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বোরহান উদ্দিন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জেলা অফিসার গৌতম কুমার সাহা প্রমূখ।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণা পরিচালক ফকির মুহাম্মাদ মুনাওয়ার হোসেন বাজার মনিটরিং এ দিনাজপুরের পুরাতন বাহাদুর বাজারে ভোজ্যতেলের ডিলার এবং ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড, তেলের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পুলিশের কর্মকর্তা এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও ক্যাবের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠিত কর্মশালার দুই পর্বে জেলার সকল নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভিন্ন দ্প্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীক, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/মি