অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ‘মব জাস্টিস’ ফের গত কয়েকদিন ধরে প্রত্যক্ষ করছে দেশবাসী। এ নিয়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। ঘটনাসমূহ নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্তাতিক মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপিসহ বির্ভিন্ন রাজনৈতিক দল। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শুক্রবারের এক জরুরি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দলীয়ভাবে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতির কারণ যাই হোক, বৈশিষ্ট ও আচরণ বিবেচনায় এটি নিঃসন্দেহে ‘মব জাস্টিস’। কোনো অজুহাতেই এমন ঘটনার দায়ভার এড়াতে পারে না সরকার। এমন ঘটনা অব্যাহত থাকলে দেশে আরও বাড়তে পারে অরাজকতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষুণ্ন হতে পারে দেশের ইমেজ। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।
অভ্যুত্থানের ছয় মাস উপলক্ষে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা জানায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পরপরই এ নিয়ে দেখা যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া। শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের নানা পেজ থেকে। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় বিভিন্ন স্থানে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং মুজিব পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ফলক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহস, নরসিংদীহ অন্তত ৩৫ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মাঝেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। গত ৫ আগস্টের পর গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জ¦ালাও-পোড়াও, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি এবং পূর্ব শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়ার খেলায় মেতে উঠেছিল কিছু অসাধু চক্র। ভাঙচুর ও আগুনের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটে। প্রকাশ্যে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির ঘটনাও দেখা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটনায় প্রতি রাতে দলবদ্ধভাবে পাহারা দেয় এলাকাবাসী। গত কয়েকদিনের ঘটনাসমূহ যেন সাধারণ মানুষকে আগের ওই সব বীভৎস অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর অকার্যকর ভূমিকা যেন আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
চলমান পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে নরসিংদীর রায়পুরায় পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ মুর্শেদ খান রাসেলের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে হামলাকারীদের গুলিতে চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা ইসলাম নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে শ্রীনগর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শান্তা ইসলাম শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের শাকিল খানের স্ত্রী। রায়পুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে দুপুরে শ্রীনগর ইউনিয়নের নূরুল ইসলামের ছেলে সোহেল মিয়াসহ ১০-১২ জন রাসেল চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে না থাকায় সোহেল ও তার লোকজন ভাঙচুর-লুটপাট চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় রাসেল চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা তাদের বাধা দিতে এলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে শান্তা পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন রাজিব জানান, ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পিঠে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানান ইসমাইল হোসেন রাজিব। চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি পূর্ব শত্রুতার প্রতিশোধ এবং হুমকি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ ও সুবিধা আদায়ের ঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদকরা। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করবে সরকার : সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টায় প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।’
সরকার ‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই সমর্থন করে না : সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, বর্তমান সরকার ‘মব জাস্টিসকে’ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। যেখানেই এ ধরনের ‘মব জাস্টিস’ হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য সরকার ‘চেষ্টা করছে’ বলেও তিনি দাবি করেছেন। গতকাল বিকেলে অমর একুশে বইমেলায় চায়না বুক স্টল পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গতকাল দলটির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বিএনপি বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল দেশে ফিরবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপরে কোনো এক সময় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে। সেখানে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি।
গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় বৈঠকটি শুরু হয়। এর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে বৈঠকটি শেষ হয়। বৈঠকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেন। বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান অবস্থায় আমরা গত বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় অবস্থান জানিয়েছি বলে জানান সেলিমা রহমান। দেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানান ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন-তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে বলে জানায় বিএনপি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, গত তিন দিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তা বিবেক ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে অনেকটাই সমর্থনযোগ্য নয়। এ সমস্ত কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই কোন দায়িত্বশীল নাগরিক সম্পৃক্ত হতে পারেনা। তিনি লিখেছেন, আমাদের আহ্বান, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মধ্যে কোনোই কল্যাণ নেই।
সবাই মিলে জোর দাবি তুলি গত ১৫ বছরে যারা খুন, গুম, লুটপাট, দুর্নীতি বিশেষভাবে ২৪ এর গণহত্যা সংগঠিত করেছে, অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার এবং সাজা নিশ্চিত করা হোক। এমন আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের ইসলামীর আমির।
হেফাজতে ইসলাম কিংবা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কোনো দায়িত্বশীল মহল চলমান সহিংস আন্দোলনের পক্ষে নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এই পরিস্থিতিতে দেশের সব বিক্ষুব্ধ জনতা ও দেশপ্রেমিক জনগণকে যেকোনো মূল্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে মামুনুল হক বলেন, আজ (গতকাল) পবিত্র জুমাকে কেন্দ্র করেও অতিরিক্ত বিক্ষোভ কিংবা শোডাউনের কর্মসূচি কোনো দায়িত্বশীল মহলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা সব দেশপ্রেমিক জনগণের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।
মামুনুল হক বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি, তার দোসর ও পরিকল্পনাকারীরা বসে নেই। জনতার জাগরণের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। ইতোমধ্যে চিন্তাশীল মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। আশঙ্কা হচ্ছে, চলমান আন্দোলনকে সহিংসতার রূপ দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে ভয়ঙ্কর চাপের মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামপ্রিয় জনতাসহ সব দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন সহিংসতা না ঘটে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিপ্লব। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠার সম্ভাবনা।
সরকার গঠনের পরও ‘মব জাস্টিস’ চলতে থাকলে দেশে স্থিতিশীলতার হওয়ার পরিবর্তে নৈরাজ্য বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। গত বুধবার রাতে তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে নূর লেখেন, ‘সরকার গঠনের পরও মব জাস্টিস চলতে থাকলে দেশে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে নৈরাজ্য বাড়বে। দেশে কর্মরত কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেগেটিভ বার্তা যাবে; যা আমাদের কারও জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইতিবাচক মানসিকতায় আমাদের দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে অভ্যুত্থানের শক্তিসমূহই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায়ে ঐক্য পরিষদের সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
মান্না বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ সারা দেশে বাড়িঘরে ভাঙচুর, আগুন লাগছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা তো নেননি, বরং সরকারের বুলডোজার গিয়ে ভেঙেছে। খালি আবেগের উপরে চলবেন না। এই দেশ আমাদের গড়তে হবে।’
বিবৃতিনির্ভর নির্লিপ্ততা নয়, সরকারের কার্যকর ভূমিকা চায় টিআইবি : ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ প্রায় সারা দেশে গত দুই দিনে ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবি ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে ‘অস্বাভাবিক ভাঙচুর ও সহিংসতা’ উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি এসব ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকাকে ‘বিবৃতিনির্ভর নির্লিপ্ততা’ উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে শুধু বিবৃতি দিয়ে দায়িত্বসম্পন্ন করা নয়, সরকারের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য বলেও মনে করে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে ধ্বংসাত্মক তৎপরতার পথ পরিহার করে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের সীমাহীন লালসা-তাড়িত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বেশি অপূরণীয় ক্ষতি করেছে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। বহুমাত্রিক অধিকার হরনের শিকার আপামর দেশবাসীর ক্ষোভের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে পলাতক শেখ হাসিনা ও তার দেশি-বিদেশি সহযোগীদের নির্লজ্জ ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে। তাই বলে আইনসিদ্ধ প্রতিক্রিয়ার পথ অনুসরণ না করে দেশব্যাপী যে প্রতিশোধপ্রবণ ভাঙচুর ও সহিংসতা চলেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশ-বিদেশে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেবে না।’
শুধু দায়সারা বিবৃতি দিয়ে নয়, যেকোনো পরিস্থিতি আইনসিদ্ধভাবে মোকাবিলায় সরকারকে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ ভিন্নমত পোষণকারীদের মামলা দিয়ে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সবার গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, সেই আশা করে টিআইবি।
ভোরের আকাশ/মি