-->
শিরোনাম

উত্তর প্রদেশে এবার মোদির পরীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক
উত্তর প্রদেশে এবার মোদির পরীক্ষা
দেশটির ৫টি রাজ্যে নির্বাচন চললেও সবার চোখ সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে।

বিধানসভা নির্বাচনের উত্তাপ চলছে ভারতে। এবার দেশটির ৫টি রাজ্যে নির্বাচন চললেও সবার চোখ সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে। রাজ্যটিতে বর্তমানে ক্ষমতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এ রাজ্যের নির্বাচনকে তাই দেখা হচ্ছে মোদির জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হিসেবে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী কৌশল কতটা কাজে দেয় সেই জবাবও মিলবে এই উত্তর প্রদেশে। 

উত্তর প্রদেশে রাজ্যের বিধানসভার ৪০৩ আসনে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে।

প্রথম দফার নির্বাচনের জন্য এরইমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন দল। প্রথম ধাপে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ১০৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। গোরক্ষপুর থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ভোটে মূল লড়াই হবে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির (সপা) মধ্যে। যোগীর নেতৃত্বে বিজেপি দ্বিতীয়বার উত্তর প্রদেশে সরকার গড়বে, নাকি চমকে দেবে সমাজবাদী পার্টি, সেই উত্তর মিলবে ১০ মার্চ।

উত্তর প্রদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যা ২৪ কোটি। ভারতের পার্লামেন্টে এ রাজ্য থেকে ৮০ জন এমপি নির্বাচিত হন।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এ রাজ্য থেকেই এসেছেন। এর রাজ্য থেকেই এমপি হয়ে ২০১৪ সালে লোকসভায় এসেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি। উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে ২০১৯ সালেও পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।

বিজেপির ২০১৪ ও ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার পেছনে শক্তি জুগিয়েছে এ রাজ্যের ভোটের ফল। বলা হয়, এ রাজ্যে যে দল জেতে, তারাই ভারত শাসন করে। এ কারণেই এ রাজ্যটি গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনী লড়াইয়ে মূল খেলোয়াড় যারা

নব্বইয়ের দশকে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে অদল-বদল করে ক্ষমতায় ছিল সমাজবাদী পার্টি (সপা) ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি)। ওই সময়ে বিজেপি আর কংগ্রেস ছিল কোণঠাসা।

তবে ২০১৭ সালে বিজেপি ৩১২ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এটি ছিল নরেন্দ্র মোদির কারিশমা। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ। এই গেরুয়া বসনের যোগী রাজ্য চালাচ্ছেন ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে।

মুসলিমবিরোধী মনোভাব কাজে লাগিয়ে ফের দলকে জেতাতে চাচ্ছেন যোগী। তার সমর্থনে গত কয়েক মাসে অন্তত ১০ বার রাজ্যটি সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  

এবার আদিত্যনাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা হয় সপার অখিলেশ যাদবকে। ২০১৭ সালে বিজেপি হাতে ধরাশায়ী হয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ।

অন্যদিকে এবার ফিরে আসতে চাচ্ছেন রাজ্যের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। দলিতদের আইকন এই নারীর নেতৃত্বাধীন দল বিএসপি সর্বশেষ ক্ষমতায় ছিল ২০১২ সালে।

এছাড়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে এগিয়ে যেতে চায় কংগ্রেস।

ভাগ্য পরীক্ষার নির্বাচন

উত্তর প্রদেশের এবারের নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ওপর ‘গণভোট’ হিসেবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য এই নির্বাচন একটি পরীক্ষা।

এ রাজ্যে গত ১৯৮৯ সালের পর থেকে কোনো দল টানা দুইবার ক্ষমতায় আসেনি। তাই এবারের ফলই বলে দেবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও মোদি জনপ্রিয়তা কতটা ধরে রেখেছেন।

এ নির্বাচনের ফল মোদি ছাড়াও কয়েক জন প্রভাবশালী নেতার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দেবে।

উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস জিতবে এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মুখ্যমন্ত্রী হবেন- এমন স্বপ্ন দেখে না দলটি। তবে প্রিয়াঙ্কাকে সামনে রেখে কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে, যা ভবিষ্যত বিনির্মাণ করবে। 

একসময় কংগ্রেস বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও। এবার নির্বাচনে জিতে মায়াবতী ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমন আশাও কেউ করছেন না। তার দল গতবারের মতো এবারও খারাপ করলে জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন মায়াবতী।

অখিলেশ যাদব গত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও গদি টিকিয়ে রাখতে পারেননি। এবারও যদি না পারেন, তবে তিনিও হারিয়ে যেতে পারেন মায়াবতীর মতো।

তাই এবারের ভোট যেমন মোদির জন্য পরীক্ষা, তেমনি যোগী, অখিলেশ, প্রিয়াঙ্কা, মায়াবতীর মতো অনেকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে।

সূত্র: বিবিসি।

মন্তব্য

Beta version