ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে রাশিয়ার দাবি ন্যাটো পূরণ করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব জেনস স্টলটেনবাগ। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ন্যাটোর মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার দাবি পূরণ করতে পারব না। রাশিয়া ইউক্রেনের সীমানা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেনি তাই এখানে সংঘাতের ঝুঁকি রয়ে গেছে।’
ইউক্রেইন ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র উত্তেজনার মধ্যে পূর্ব ইউক্রেইনের রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংঘাতের হুমকির মুখে নারী ও শিশুদের রাশিয়ার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার একদিন পর তারা এ ঘোষণা দেয় বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
শনিবার স্বঘোষিত দোনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর) প্রধান ডেনিস পুশিলিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, তিনি সামরিক প্রস্তুতির একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং যারাই ‘হাতে অস্ত্র নিতে সক্ষম’ তাদের সামরিক দপ্তরে ডাকা হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিড পাসেচনিকও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের ক্ষেত্রে একই রকম একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে শুক্রবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর আসন্ন হামলার আশঙ্কার কথা বলে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে রাশিয়ায় প্রায় ৭ লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। তবে কিয়েভ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকায় হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে।
একদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্øাদিমির পুতিন বলেছেন, যে তিনি শনিবার ইউক্রেনের সীমান্তে বড় সামরিক মহড়ার তদারকি করবেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই আক্রমণাত্মক আচারণের প্রতিবাদে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোগাতে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন।
শনিবার সকাল পর্যন্ত দোনেস্ক থেকে ৭ হাজারের মতো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি মন্ত্রণালয়। পূর্ব ইউক্রেইনের রুশপন্থি’ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর শনিবার সকালেও ১২ বার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর।
প্রতিবেশী ইউক্রেইনে হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে, ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে কোনো ধরনের ‘নাটক’ সাজানোর পরিকল্পনায় আছে রাশিয়া, যাতে হামলার জন্য একটা ‘অজুহাত’ পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হুুঁশিয়ারি: যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে তা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার চরম মাত্রার অর্থনৈতিক নিষেধাঙ্গা জারি করবে। ‘কোন দেশের জাতীয় সীমানা জোর করে পরিবর্তন করা উচিত নয়’ হ্যারিস
হ্যারিস আরো বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছি যা দ্রুত, তীব্র এবং ঐক্যবদ্ধ হবে। আমরা রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মূল শিল্পগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করব। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে হ্যারিস জানিয়েছেন ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর পূর্ব দিকের অংশকে আরো শক্তিশালী করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে মস্কো, যাদের মধ্যে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রাশিয়ার সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারাও আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনো এত বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটায়নি রাশিয়া। আর এই বাহিনীর অর্ধেকই ‘অ্যাটাক পজিশনে’, অর্থাৎ হামলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, বলে ভাষ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের।
আল জাজিরা থেকে অনূদিত।
মন্তব্য