রাশিয়া শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে, যাকে গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, রুশ সৈন্যরা উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক দিয়ে ইউক্রেনে ঢুকেছে। রুশ সৈন্যরা এখন কিয়েভের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। পুরো ইউক্রেন জুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভে বড় যুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া উত্তর ইউক্রেনে, দক্ষিণের ওডেসায় লড়াই চলছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামরিক অভিযান বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে কথা বলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ।
বিবিসি জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিয়েভে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নাশকতাকারীরা কিয়েভে প্রবেশ করেছে। রাশিয়ার হামলায় সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে ১৩৭ জন নিহত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের বড় বড় অনেক শহর এবং সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তেজস্ক্রিয় চেরনোবিল পারমাণবিক এলাকা রুশ সেনাদের হাতে চলে গেছে। সেখানে অনেককে জিম্মি করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক। অনেকে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় নিজের এলাকায় থেকেই বাঙ্কারে, ভূগর্ভস্থ স্টেশনে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন।
যুদ্ধ করার উপযুক্ত সবাইকে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনের সরকার।
ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান নতুন করে রাশিয়ার ব্যাংক, কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তাকে পুতিনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেছিলেন, কারণ তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
মানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন, তিনি পুতিনকে ফোন করে বলেছেন যেন তিনি সামরিক অভিযান বন্ধ করেন। টেলিফোন কথোপকথন 'খোলামেলা, সরাসরি আর দ্রুত' হয়েছে বলে তিনি জানান।
‘আমি তাকে আরো অনুরোধ করেছি যেন তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি (জেলেনস্কি) এই অনুরোধ করেছিলেন, কারণ তিনি মি. পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না,’ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন ম্যাক্রঁ।
হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষায় আর কোনো বিকল্প ছিল না।
যুদ্ধে জড়ানোর প্রতিবাদে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজার-হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের সময় শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরোদমে সেনা অভিযান শুরুর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দেশটিতে সামরিক-বেসামরিক অন্তত ১৩৭ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার ভোররাতে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন: ‘তারা (রাশিয়ানরা) রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার মাধ্যমে ইউক্রেনকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চায়।’
বৃহস্পতিবার রূশ বাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার কিছুক্ষণ পরই ইউক্রেনে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এরপর ইউক্রেনের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একটি আদেশ জারি করেছেন, যার আওতায় আইনগতভাবে বন্দুক বহন করতে সক্ষম থাকা সব ইউক্রেনিয়ান নাগরিককে তাদের মাতৃভূমি রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মন্তব্য