-->

পুতিনের কাছে পশ্চিমাদের হারের কারণ ভিরুতা ও লোভ

মোমেনা আক্তার পপি
পুতিনের কাছে পশ্চিমাদের হারের কারণ ভিরুতা ও লোভ

পশ্চিমা বিশ্ব সবসময় পুতিনকে এক হাত দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। কারণ তাদের আরেকটি হাত পেছন দিকে বাঁধা থাকে। তারা ভীরু, লোভী ও অলস। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমাদের মধ্যে

এ বিষয়গুলো কাজ করছে। ইউক্রেন ইস্যুতেও তাদের ভূমিকা একই। এবং এসব কারণে তারা বারবার পরাজিত হয়। পশ্চিমা জোট ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন কি তারা

এই যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাহস পাবে?

রাশিয়া যখন আলেকজান্ডার লিৎভিনেনকোকে হত্যা করে, জর্জিয়ায় আগ্রাসন, সিরিয়া যুদ্ধে সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন, ক্রিমিয়া দখল, লিভিয়া ও সাহেল অঞ্চলে ভাড়াটে খুনি পাঠানো, যুক্তরাষ্ট্রের

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিকৃত করা, সাইবার যুদ্ধ চালানো, ইন্টারনেটকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা এবং স্ক্রিপালদের বিষ প্রয়োগ করা- এসব কর্মকাণ্ডের জন্য মস্কোকে যে শাস্তি দেওয়া হয়, সেগুলো ছিল স্বল্প মেয়াদি, অকার্যকর বা অস্তিত্বহীন।

পুতিন কী ধরনের মানুষ সে সম্পর্কে গত কয়েক বছর ধরে খুব ভালোভাবেই অবগত পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। পুতিনের শাসন কাজ সম্পর্কেও তারা ওয়াকিবহাল। তবু তারা কিছু জানে না বা বুঝতে পারছে না এমন ভান

করছেন। কেউ কেউ তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চুপ করে আছেন। বিশেষ করে ফ্রান্স এবং ইতালির অনেক উগ্র ডানপন্থি দল তার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেয়। এ কারণে তারা সবসময় পুতিনের সব আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়। ইউক্রেন আগ্রাসনের আগেও পশ্চিমা নেতারা একই আচরণের পুনরাবৃত্তি করেছে। এমনকি ১৯৪৫ সালের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে বলে যে কথা ওঠে তারা সেটারও নিন্দা জানায়। তবে তারা জরুরি

ভিত্তিতে নিজেদের সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মনে হচ্ছে, তারা ঘুষি মারার জন্য মুষ্টিবদ্ধ করা হাত আবার নিজেদের দিকেই টেনে এনেছে। এখন সবকিছু হাতের বাইরে চলে গেছে। এটাও পশ্চিমাদের হারের একটি কারণ।

ইউক্রেন সংকট শুরুর পর থেকেই পশ্চিমাদের দেখা গেছে রক্ষণাত্মক ভূমিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলারদের মতে, এটি অপরাধ এবং সময় হয়েছে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করার। উদাহারণসরূপ বলা যায়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র

ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা পুতিনকে ভ্রমাচ্ছন্ন ও অযৌক্তিক দাবি করে তাকে কিছু শর্ত দিয়ে পিছু হটার পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের সেসব শর্তের যে কোনো একটিই আগ্রাসন চালানোর জন্য যথেষ্ট।

যেহেতু পশ্চিমা বিশ^ ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের উচিত রাশিয়ার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা। পুতিনকে অবশ্যই ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এই একটি মাথা সরাতে পারলে ইউক্রেন, বিশ্ব

ব্যবস্থা ও রাশিয়া বাঁচতে পারে। রাশিয়ার যেসব জনগণ সেদেশে নতুন নেতৃত্ব চায়, পশ্চিমাদের উচিত প্রকাশ্যে তাদের সাহায্য করা। পুতিনের পাগলামি ছোটানো। তার ঘাঁটি উচ্ছেদ করা। তাকে ও তার বন্ধুদের ভয় দেখানো।

কেন জো বাইডেন ও বরিস জনসন রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী কর্মী এলেক্সি নাভালনির মুক্তি দাবি করেননি। পুতিন ২০২০ সালে নাভালনিকে নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এরপর তাকে জেলে দেন। কেন

রাশিয়ায় নতুন ও অবাধ নির্বাচন আহ্বান করা হয়নি। পশ্চিমা নেতাদের উচিত, দেশপ্রেমিক রুশ জনগণকে বোঝানো- যাতে তারা ২০১৪ সালে ইউক্রেন বিপ্লবীদের বই থেকে একটি পাতা ছিঁড়ে নেয়, পুতিনের পুলিশি রাষ্ট্রকে

অস্বীকার করে (২০১১ সালে মস্কোতে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ) এবং সোভিয়েত যুগে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নকে ছুঁড়ে ফেলে।

পশ্চিমারা কি এসব করবে? সম্ভাবনা খুবই কম। একজন অপ্রতিরোধ্য শাসক নজিরবিহীন হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন অথচ পশ্চিমা নেতারা তাকে ঘাঁটাতে ভয় পাচ্ছেন। তারা নিয়ন্ত্রণ হারানোর ও অপ্রত্যাশিত ফলের ভয় পাচ্ছেন। একটি

জিনিসই যুদ্বকে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া থেকে আটকাতে এবং ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ এড়াতে পারে- সেটা হলো পুতিনকে উৎখাতে রুশ জনগণকে সাহায্য করা। কিন্তু তারা সেটা করারও সাহস পায় না। এটাও পশ্চিমাদের হারের অন্যতম কারণ।

কিয়েভকে ন্যাটোর পূর্ণাঙ্গ সদস্য করলে আক্রমণ করা হবে বলে কেন আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল? যদি পুতিনকে পিছু হটানো সম্ভব না হয় বা আলোচনার পথে আনা না যায় তাহলে তাকে কেন একঘরে করে দেওয়া হয়নি?

পশ্চিমাদের এসব না পারা পুতিনকে তার উদ্দেশ্য সাধনের সুযোগ করে দিয়েছে।

ইউক্রেনে হামলা হলে ন্যাটো বাহিনী যুদ্ধ করবে না- এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি পুতিনকে আশস্ত করেছে? হতে পারে এটাকে সবুজ সংকেত মনে করেই পুতিন এগিয়েছে। হয়তো হামলা হবে না- মিত্রদের

মধ্যে সবসময় এ ধরণের অস্পষ্টতা কাজ করেছে। ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের এমপি ও সাবেক সৈনিক টোবিয়াস এলউড কয়েক সপ্তাহে আগে রাশিয়ার অগ্রগতি রোধে সতর্কবার্তা হিসাবে ইউক্রেনে সীমিত সংখ্যাক ন্যাটো সৈন্য

পাঠানোর জোর দাবি জানান। কিন্তু তার সে দাবি কেউ গ্রাহ্য করেনি। এখনো একইভাবে ইউক্রেনে ন্যাটোর বিমান হামলার দাবিও খারিজ হয়ে গেছে।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী উইন চার্চিলের পথে হাটা বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিয়েভ সফরে গিয়ে জোর গলায় সেদেশের প্রতি পূর্ণাঙ্গ সংহতি প্রকাশ করেন এবং আগ্রাসন প্রতিহতে কাজ করবেন বলে জানান। কিন্তু

সেখানে ব্রিটিশ সৈন্য মোতায়েনের মতো সাহসী এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টা এখনো বহু দূরে।

পুতিনের অন্যের সীমানাকে সম্মান না করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে পোল্যান্ড এবং লুথানিয়া গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়েনে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের এ প্রস্তাব এখনো বাস্তবায়ন করা যায়।

কিন্তু তার আগে মস্কো থেকে ইউরোপীয় (ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র) রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন, রাশিয়ার তেল-গ্যাস রফতানি, বাণিজ্য ও ব্যাংকের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। কেন সেটা এখনো

করা হয়নি? পুতিন এখনো কেন এসব বিধি-নিষেধ থেকে অনেক দূরে। পুতিনের বিরুদ্ধে এসব সিদ্ধান্ত আরোপের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ সব কিছুর মুলে রয়েছে নোংরা অর্থ। ইউরোপে জ¦ালানীর মূল্য আকাশ ছোঁয়া হতে

পারে। রফতানি ও বিনিয়োগকারীরা এসব বাজে কাজে লিপ্ত হতে পারে। কারণ পশ্চিমা নেতারা এখনো নিজেদের যৌক্তিক হিসাবে জাহির করার চেষ্টা করছে।

পুতিনকে থামানোর মতো খুব দ্রুত আরো কিছু কি করা যায়? হয়তো নিশ্চয়ই করা যায়। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে- যে যাই বলুক না কেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত পুতিন আরো কয়েক সপ্তাহ আগেই নিয়েছে। ফ্রান্সের

প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। হয়তো তাকে থামানোর কোনো সুযোগই ছিল না। দ্য গার্ডিয়ান।

 

মন্তব্য

Beta version