-->

ডলারের বিপরীতে রুবলের মান কমেছে ৩০ শতাংশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডলারের বিপরীতে রুবলের মান কমেছে ৩০ শতাংশ

ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল ডলারের বিপরীতে ৩০ শতাংশেরও বেশি মূল্য হারিয়েছে।

রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মান অব্যাহত কমার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ান স্টক মার্কেটে লেনদেন শুরু হতে বিলম্ব হয়েছে। আগের দিন রুবল দর হারিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর সর্বশেষ ঝড় বয়ে যায় গত শনিবার যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

প্রসঙ্গত: সুইফট হচ্ছে একটি বৈশ্বিক আর্থিক বার্তা পরিষেবা সংস্থা। সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার কারণে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জব্দ থাকবে।

তবে রাশিয়ার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন গত আট বছর ধরে রাশিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার উপযোগী করে তুলেছিল এবং যুদ্ধ-উত্তর প্রস্তুতি মোকাবিলা করতে ৬৩০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ করেছেন।

কিন্তু তার ‘শক্তিশালী’ অর্থনীতি এখন অভূতপূর্ব অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন নিষিদ্ধ করব এবং পুতিনকে যুদ্ধে অর্থ জোগান রোধ করতে তার সব সম্পদ জব্দ করব।’

রুবলের পতনের মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার সুদের হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করছে।

রাশিয়ার কিছু ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর টাকা তোলার জন্য এটিএম বুথে ভিড় করছে রাশিয়ার লোকজন

 

টাকা তুলতে দীর্ঘ লাইন

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার জনগণ টাকা তুলতে এটিএম বুথের সামনে ভিড় করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে এই ভিড় দীর্ঘ লাইনে পরিণত হচ্ছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে।

রুবলের দাম রেকর্ড পরিমাণ নেমে গেছে। মুদ্রার দাম পতনের আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে দেরিতে এবং রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণেরও বেশি করেছে।

এসব সমস্যা সত্ত্বেও, ক্রেমলিন আশাবাদী তারা এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবিলা করতে পারবে। এদিকে, এ সংকট নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন আজ তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।

রাশিয়ার জনগণ ইতোমধ্যে একটি পার্থক্য বুঝতে শুরু করেছে। টাকা তুলতে তারা হুড়াহুড়ি করছে। এটিএম বুথে লোকের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।

আসছে দিনগুলোতে রাশিয়ার জনগণ হয়ত টের পাবে যে, তাদের সঞ্চয়ের মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করেছে। অনেককে হয়ত চাকরি হারাতে হতে পারে।

স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। তার এ নির্দেশের পরই ইউক্রেনে পুরো মাত্রায় হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। আজ তৃতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।

পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে এবং ওই অঞ্চলে শান্তিরক্ষার নামে সৈন্য পাঠানোয় একের পর এক পশ্চিমা নিষেধোজ্ঞার কবলে পড়ছে রাশিয়া।

আক্রমণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাজ্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রুশ হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ২৪০ বেসামরিক লোক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভবন এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহারের’ দাবি জানানো হয়েছে।

বিবিসি, সিএনএন।

মন্তব্য

Beta version