ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্য যুদ্ধ চলছে। আর এই যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পারমানবিক অস্ত্রকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে সেটি পুরোপুরি পরিষ্কার না।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সতর্কতার মাত্রা সম্পর্কে পুতিন যা বলেছেন সেটি তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
কেউ-কেউ বলছেন, পুতিন আসলে সবচেয়ে কম যে সতর্কতার মাত্রা 'কনস্ট্যান্ট' সেখান থেকে পরবর্তী ধাপ 'এলিভেটেড' অর্থাৎ সামরিক ডেঞ্জার বা বিপদ পর্যায়ে উত্তরণের কথা বলেছেন। তবে এটিও নিশ্চিত নয়। প্রতিটি পদক্ষেপ অস্ত্র প্রস্তুত করার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এর অভিমত, পুতিনের ঘোষণা বাগাড়ম্বর বলেই তার কাছে মনে হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এ নিয়ে কোন ঝুঁকিই নেই।
গত সপ্তাহে পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, কোনো দেশ যদি রাশিয়ার পরিকল্পনায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে তাহলে তাদের এমন পরিণতির মুখে পড়তে হবে যে পরিস্থিতি আগে কখনো তারা মোকাবেলা করেনি।
মোটা দাগে অনেকে মনে করছেন-এটি আসলে ন্যাটোকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, যাতে ইউক্রেন সংকটে তারা জড়িত না হয়।
ন্যাটো অবশ্য এর মধ্যেই জানিয়েছে, তারা সেটি করবে না, কারণ তারা জানে এটা তাদের সরাসরি রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ফেলতে পারে যা সংঘাতকে পারমাণবিক যুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
পুতিন জানান, তাঁর পদক্ষেপ 'আগ্রাসী বিবৃতির' জবাব। ক্রেমলিন জানায়, বিবৃতি বলতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বক্তব্যগুলোকে বোঝানো হয়েছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস-ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের ভুল হিসেব-নিকেশ থেকেই নতুন সতর্কতাটি এসেছে। তিনি হয়তো ইউক্রেন থেকে কী ধরণের প্রতিরোধ আসবে সেটি ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেননি। পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিষেধাজ্ঞা দিবে-এটিও তিনি ধারণা করতে পারেননি।
একজন ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, এটি রাগ, হতাশা ও অসন্তোষের লক্ষণ।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, এটি আসলে যুদ্ধকে জায়েজ করে নিতে পুতিনের একটি চেষ্টা মাত্র, যার মাধ্যমে তিনি আক্রমণকারী নন এমনটি দাবি করার চেষ্টা করছেন।
এভাবে চিন্তা করলে পারমাণবিক সতর্কতা আসলে নিজের দেশের জনগণকে দেয়া একটি বার্তা।
আর অন্য দিক থেক দেখলে মনে হয়-পুতিন ইউক্রেনের মানুষকে সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে পশ্চিমা পরিকল্পনা নিয়ে মূলত উদ্বিগ্ন। তার আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো নিষেধাজ্ঞা। যেটি তিনি তার ঘোষণাতেও বলেছেন যে, অসন্তোষ তৈরি করে তার সরকারকে উৎখাতের জন্যই এটি করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বিষয়টি হলো ন্যাটোর প্রতি একটি সতর্কবার্তা।
পুতিনের হুমকিকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছার পরিবর্তে সতর্কতা মনে করা হয় তাহলেও সেখানে যদি কোনো পক্ষ অপরপক্ষকে ভুল বোঝে তাহলে একটি ভুল হিসাবনিকাশের ঝুঁকি থেকে যায়।
অনেকের ভয় যে, পুতিন কখন কোন সিদ্ধান্ত নেন সে সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। তিনি যদি সবার কাছ থেকে খুব দূরে সরে যান তাহলে নীচের দিকে চেইন অব কমান্ড তার আদেশ বাস্তবায়নে অনীহাও দেখাতে পারে।
সব মিলিয়ে একটি পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা কিছুটা বাড়লেও প্রকৃত অর্থে এটি এখনও অনেক কম।
পশ্চিমা সরকারগুলো খুব সতর্ক যেন হম্বিতম্বি হোক আর কাজেই হোক পরিস্থিতির যেন অবনতি না হয়। পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, এটা এখন কোনো পারমাণবিক সংকট না এবং সেটি হওয়াও উচিত হবে না।
মন্তব্য