-->

তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া

* যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ * বাইডেন-জেলেনস্কি ফোনালাপ * মস্কোকে দমাতে বরিসের ৬ দফা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া
যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন স্বামী। ইউক্রেনের ইরপিন শহর ছেড়ে যাচ্ছেন স্ত্রী। দুজনের সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা, সে ভাবনায় অশ্রুসিক্ত বিদায়। ছবি- মেইল অনলাইন

বোমা হামলা, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, তা লঙ্ঘন এবং আবার নতুন করে যুদ্ধবিরতি- এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইউক্রেনের সর্বত্র। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ১১তম দিনে গড়িয়েছে গতকাল রোববার। এদিন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সামরিক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। রুশ বাহিনী কিয়েভের কাছে জলবিদ্যুৎ বাঁধ দখলের চেষ্টা করছে। যুদ্ধ বন্ধের বা স্থায়ী বিরতির বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

সর্বত্র বোমা হামলা চালিয়ে ইউক্রেনবাসীদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেন তাদের সর্বস্ব দিয়ে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করে যাচ্ছে। যদিও এভাবে খুব বেশিদিন রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, রাশিয়ার বিশাল সামরিক বহরকে ঠেকিয়ে রাখার মতো অস্ত্রশস্ত্র, জনবল কোনোটাই ইউক্রেনের নেই।

দিন দিন ইউক্রেন যুদ্ধ জটিল আকার ধারণ করছে। কিয়েভের দিকে চোখ রেখেই এগুচ্ছে রুশ বাহিনী। ক্রিমিয়া হয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর খারকিভ এবং মাইকোলাইভে একটি স্থল করিডোর স্থাপন করে অগ্রসর হচ্ছে তারা। পশ্চিমাদেশগুলো গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের পাশে থাকার কথা বলে গেলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাই যুদ্ধ করে যাচ্ছে ইউক্রেন। যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই আবারো আলোচনায় বসছে ইউক্রেন ও রাশিয়া।

আজ (সোমবার) তৃতীয় দফার আলোচনায় মিলিত হবে দুই দেশ। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের আলোচক ডেভিড আরাখামিয়া বলেন, শত্রুতা অবসানে আলোচনা হবে। এর আগে বেলারুশে দুই দফা বৈঠকে মিলিত হলেও এখন পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

এদিকে ইউক্রেন সংকট নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে বলেন, আগুনে ঘি ঢালবে- এমন যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে বেইজিং। কেবলমাত্র আলোচনা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান হতে পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনাকে উৎসাহিত করার কথাও জানান তিনি।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে নতুন করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতিও খণ্ডকালীন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় এই বন্দরনগরী থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। সুমাই অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেন সরকারের উপদেষ্টা ভাদিম দেনিসেনকো। বলেন, সুমাই অঞ্চলের উত্তরের আখতিরকা ও ত্রস্তিয়ানেতস শহরে বিদ্যুৎ ও পানি নেই।

এদিকে ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা বিশ্ব আরোপ করেছে, তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বর্ণনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর যদি কেউ নো ফ্লাই জোন করার চেষ্টা করে, তাহলে ধরে নেব, তারা নিজেদের সশস্ত্র সংঘাতে জড়াচ্ছে। রাশিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা কিংবা সামরিক আইন জারির সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করে দেন।

ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের প্রায় প্রথম থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাতেও রাশিয়াকে থামানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে গতকাল ফোনে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক টুইটে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ইস্যু, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সামরিক বিমান ঘাঁটিতে হামলা

ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ জানায়, দূরপাল্লার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে চালানো এ হামলায় ইউক্রেনের স্টারোকোস্টিয়ানটিনিভ সামরিক বিমান ঘাঁটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে এ হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও ধ্বংস করা হয়েছে। এর বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ইউক্রেনের ১০টি বিমান ও হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে।

জলবিদ্যুৎ বাঁধ দখলের চেষ্টা

ইউক্রেন জানিয়েছে, রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ বাঁধ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। গতকাল দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া কানিভ জলবিদ্যুৎ দখলের পরিকল্পনা করেছে। এটি কিয়েভ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে দিনিপার নদীতে অবস্থিত। তবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি রুশ বাহিনী। ইতোমধ্যে রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনের একাধিক বিদ্যুৎ অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জিয়া তাদের দখলে রয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনে বেশ কিছু কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরেরও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া।

মারিউপোলে আবারো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলে আবারো খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথমটির মতো সর্বশেষ এই যুদ্ধবিরতিও খণ্ডকালীন। শহরের সিটি কাউন্সিলর জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় এই বন্দরনগরী থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে শনিবারও খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়। কারণ, ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া প্রতিশ্রুতি মতো মানবিক করিডর তৈরি করেনি এবং মারিউপোলের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে যেতে বাধা দিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনবাসী শর্ত পালন করেনি।

তারা কোনোভাবেই শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী নয়। এছাড়া, ইউক্রেনের সুমাই অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেইন সরকারের উপদেষ্টা ভাদিম দেনিসেনকো। বলেন, সুমাই অঞ্চলের উত্তরের আখতিরকা ও ত্রস্তিয়ানেতস শহরে এখন বিদ্যুৎ ও পানি নেই।

আগুনে ঘি ঢালার বিরুদ্ধে চীন

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে বলেছেন, আগুনে ঘি ঢালার মতো যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে বেইজিং। কেবলমাত্র আলোচনা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমেই ইউক্রেন সংকটের সমাধান হতে পারে। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দুই সপ্তাহে এ নিয়ে দুইবার ফোনালাপ হলো। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনাকে উৎসাহিত করার কথাও জানান।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চীনের জন্যও বড় ধরনের সংকট নিয়ে হাজির হয়েছে। তার এখন পর্যন্ত রুশ হামলার নিন্দা জানায়নি। আবার মস্কোর ওই পদক্ষেপকে দৃশ্যত স্বাগতও জানায়নি তারা। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে চীন ভারসাম্য বজায় রেখে এগুতো চায়। তারা রাশিয়াকে ক্ষেপাতে চায় না। আবার ইউক্রেনকেও নাখোশ করতে ইচ্ছুক নয়।

নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল : পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে মস্কোর ওপর পশ্চিমাবিশ^ যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি হুশিয়ার করেছেন, ইউক্রেনে যদি কেউ নো ফ্লাই জোন ঘোষণার চেষ্টা করে, তাহলে ধরে নেব- তারা নিজেদের সশস্ত্র সংঘাতে জড়াচ্ছে। শনিবার মস্কোতে অ্যারোফ্লোট এয়ারলাইন্সের একটি ট্রেইনিং সেন্টারে বিমানবালাদের এক অনুষ্ঠানে এসব বলেন তিনি।

এসময় রাশিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা কিংবা সামরিক আইন জারির আশঙ্কা তিনি নাকচ করে দেন। ইউক্রেইন যুদ্ধের পক্ষে সাফাই গেয়ে পুতিন বলেন, রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষার জন্যই বেসামরিকীকরণ এবং নাৎসিবাদীদের উৎখাতের কাজে হাত দিয়েছেন। রুশ বাহিনী ইউক্রেইনে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাচ্ছে না বলে যে পর্যবেক্ষণ পশ্চিমা বিশ্লেষকরা দিচ্ছেন, তা নিয়ে তিনি বলেন, তার সেনাবাহিনী সব কাজ ঠিকঠাক করছে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিকই চলছে।

১১ দিন আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য রাশিয়ার অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়া। বেশ কিছু ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লেনদেনের যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম সুইফট থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে রাশিয়া। এমনকি বিদেশে পুতিনের সম্পদ জব্দ করারও ঘোষণা এসেছে। নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মানে রেকর্ড পতন হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকের সুদের হার দ্বিগুণ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মনোবল ভাঙতেই শহরে শহরে বোমা

ইউক্রেনের মনোবল ভাঙতেই চলমান দেশটির শহর ও জনবহুল এলাকাগুলোতে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে রাশিয়া। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে রোববার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের মুখে ইউক্রেনের প্রতিরোধ মস্কোকে বিস্মিত করেছে। এ কারণেই খারকিভ, চেরনিহিভ ও মারিউপোলসহ অন্য শহরগুলোকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।

প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে সিরিয়া এবং ১৯৯৯ সালে চেচনিয়াতে রাশিয়া যে সামরিক কৌশল অবলম্বন করেছে ইউক্রেনেও একই পথে হাটছে তারা। ইউক্রেনের মতো সিরিয়া এবং চেচনিয়াতেও রুশ বাহিনী ভবন ও ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে।

ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো। সর্বাত্মক হামলা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সামরিক অবকাঠামোর বাইরে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল। জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১৫ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।

বাইডেন-জেলেনস্কি ফোনালাপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে স্থানীয় সময় রোববার ফোনে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এসময় ইউক্রেনের নিরাপত্তা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও ইউক্রেনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়।

এক টুইটে জেলেনস্কি বলেন, চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে বাইডেনের সঙ্গে আবারো আলোচনা করেছি। আধঘণ্টার ওই আলোচনার বিষয়ে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বাইডেন তার প্রশাসন ও মিত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভিসা ও মাস্টারকার্ড কর্তৃপক্ষ রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়েও গুরুত্ব দেন বাইডেন।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেন নেতা যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের ভিডিও কলে আরো সহযোগিতার আহ্বান জানান। এসময় রাশিয়ার তেল আমদানি কালো তালিকাভুক্ত করার জন্যও বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা অতিরিক্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিলেও তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এতে তেলের দাম ও মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে।

পুতিনকে দমাতে বরিসের ৬ দফা

ইউক্রেনে রুশ আগ্রসন শুরু হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাতেও রাশিয়া পিছু হটছে না। এমন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ ব্যর্থ এই ছয় দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- এক. বিশ্ব নেতাদের ইউক্রেনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানবিক জোট গঠন। দুই. আত্মরক্ষার জন্যই তাদের (দেশগুলোর) উচিত ইউক্রেনকে সমর্থন করা। তিন. রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি। চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে হবে। পাঁচ. যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক সমাধানের পথ অনুসরণ এবং সেটি হতে হবে কেবল ইউক্রেনের বৈধ সরকারের পূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যম। ছয়. সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরো জোরদারে একটি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে আজ (সোমবার) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন বরিস। বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে কানাডীয় ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বরিস তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version