মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। এবার তাতে যোগ দিলেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা। শনিবার কলম্বোয় জনগণের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির।
শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়। এ দুই তারকা ক্রিকেটার প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার আন্দোলনে সমর্থন জানাতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত খেলা ছাড়ার পর এই দুই সাবেক ক্রিকেট তারকাই দেশটির রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। অর্জনা রানাতুঙ্গা দেশটির সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও সনাথ জয়াসুরিয়া ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোয় টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে হাজার হাজার মানুষ। এদিন রাজাপাকসের অফিসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেন রানাতুঙ্গা। বলেন, দর্শকরাই ক্রিকেট এগিয়ে নেন। আমাদের ভক্তরা আজ রাস্তায়। তারা আর কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। প্রয়োজনের সময় আমরা অবশ্যই ভক্তদের পাশে থাকব। এ প্রতিবাদে ক্রীড়া তারকাদের অবশ্যই সশরীরে যোগ দিতে হবে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর তার সহকর্মী ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া প্রেসিডেন্টের ঔপনিবেশিক আমলের অফিসের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে প্রতিবাদে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের বার্তা একেবারে স্পষ্ট। আমি আশা করছি, কর্তৃপক্ষ শুনবে এবং আমাদের সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা গোতা বাড়ি যাও, বাড়ি যাও গোতা’ স্লোগান দেন।
সাবেক এ দুই অধিনায়ক ক্রীড়াজগতের প্রথম তারকা হিসেবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে সরাসরি অংশ নিলেন। এর আগে দেশটির অন্যান্য অনেক তারকাও বিক্ষোভে সমর্থন জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা মাহেলা জয়াবর্ধনে। এছাড়া সাবেক লঙ্কান ক্রিকেট অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারাও প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রী ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। উৎপাদনে ভাটা পড়ায় দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপ রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সাধারণ জনগণ রাজপথে নেমে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গত সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, আমরা সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা বিক্ষোভ থামান, দেশ বাঁচানো জরুরি।
আন্দোলনকারী তরুণদের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে ভাবার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেনি বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেটাও প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীরা।
যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি টানা কয়েক বছর ৬ শতাংশে ছিল, সে দেশে এখন খাবারের জন্য চলছে হাহাকার। জ্বালানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। কাগজের অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ হয়ে গেছে পরীক্ষা। ওষুধ ও জরুরি সরঞ্জামের অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে চিকিৎসাসেবা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানি ঠেকায় আমদানি করতে পারছে না খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ অবস্থায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা স্বীকার করে শ্রীলঙ্কা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে।
মন্তব্য