ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লীগ।
একইসঙ্গে আরব দেশগুলোর এই জোটটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড মুসলিম অনুভূতির জন্য স্পষ্ট অপমান এবং এর ফলে ব্যাপক সংঘর্ষের সূত্রপাত হতে পারে।
পবিত্র আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে সম্প্রতি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী পবিত্র এই মসজিদের ভেতরে কয়েক দফায় অভিযান চালানোয় ঘটেছে সহিংসতার ঘটনাও।
গত রোববার অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের প্রবেশের পর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ জন আহত হয়েছিলেন। স্থানীয় সময় রোববার ফজরের নামাজের পর ইসরায়েলি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। মূলত সেসময়ই ফিলিস্তিনিদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত শুক্রবার আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযানে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হন। এছাড়া প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করে ইসরায়েল। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি মসজিদে জড়ো হচ্ছেন এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ঘিরে উত্তেজনা চললেও আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগ এতোদিন নীরবই ছিল। তবে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড ও সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে বৃহস্পতিবার নীরবতা ভাঙে সংগঠনটি।
আরব লীগ জানায়, জেরুজালেমের পুরনো শহরে মুসলমানদের ইবাদতের অধিকার ক্ষুণ্ন করছে ইসরায়েল। এর পাশাপাশি পুলিশি নিরাপত্তার মাধ্যমে উগ্র-জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের পবিত্র এই স্থানে প্রবেশের সুযোগও করে দিচ্ছে দেশটি।
ফিলিস্তিন ও আল আকসার পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জরুরি বৈঠকে বসে আরব লীগ। বৈঠকে জেরুজালেমে ইসরায়েলের অবৈধ নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকের পর জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট যে, আল আকসা এবং হারাম আল শরীফের পুরো এলাকাটি একমাত্র মুসলমানদের ইবাদত করার জায়গা।’
এদিকে আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত বলেছেন, বহু শতাব্দীর পুরনো একটি নীতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। পুরনো এই নীতি অনুসারে, অমুসলিমরা আল-আকসা প্রাঙ্গণে যেতে পারে, কিন্তু তারা (অমুসলিমরা) সেখানে প্রার্থনা করতে পারবে না।
আইমান সাফাদি বলেছেন, ইহুদি উপাসকদের আল-আকসায় প্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছে ইসরায়েল।
উল্লেখ্য, মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীদের কাছেই ঐতিহাসিকভাবে আল আকসা মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। মুসলিমদের জন্য পবিত্র আল আকসা মসজিদটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। আর মসজিদ চত্বর মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবে পরিচিত।
অবশ্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। আর সেটি নিয়েই বহু যুগ ধরে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব। ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচাইতে পবিত্র স্থান।
সূত্র: আল জাজিরা
মন্তব্য