আরো পাঁচ বছরের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থক, মধ্যপন্থি এমানুয়েল ম্যাখোঁ। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্ধী কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী মারিন লে পেনকে হারিয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। এমানুয়েল ম্যাখোঁ পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট।
জয়ের পর আইফেল টাওয়ারের বেদীতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, তিনি 'সবার প্রেসিডেন্ট হবেন'।
এদিকে হেরে যাওয়ার পরেও লে পেন বলেছেন, তিনি যে ভোট পেয়েছেন সেটা একটা জয়ের চিহ্ন।
আরো পড়ুন: ম্যাক্রোঁ না ল্য পেন: ভোট দিচ্ছে ফ্রান্সের জনগণ
এমানুয়েল ম্যাখোঁর এই বিজয়ে স্বস্তি পেয়েছেন ইউরোপিয়ান নেতারা। তাদের ভয় ছিল- কট্টর ডানপন্থী প্রার্থীরা কয়েক দফা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নীতি বিরোধী প্রস্তাব করবে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে ফ্রান্স এবং ইউরোপকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভালোদেমির জেলেনস্কি ফ্রান্সের ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছিলেন এমানুয়েল ম্যাখোঁকে ভোট দিতে। তিনি স্বাগত জানিয়ে এমানুয়েল ম্যাখোঁকে বলেছেন, ‘সত্যিকারের বন্ধু’ এবং শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ হবে সে আশা করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এমানুয়েল ম্যাখোঁর জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই নির্বাচন দুটো ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান প্রধান নির্বাচনী ইস্যু কী ছিল
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার আগের দিকে ইউক্রেনের যুদ্ধই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়।
তবে সম্প্রতি যেসব জনমত সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তাতে দেখা গেছে মানুষের জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একমাত্র প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরেই রয়েছে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অবসর ভাতা, পরিবেশ এবং অভিবাসন।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়, যা দেশটির গত অর্ধ-শতাব্দীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে তাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
ফ্রান্সের অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের ওপরেই এর প্রভাব পড়েছে।
ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪%। ইউরোজোনের দেশগুলোর গড় হারের তুলনায় এই হার সামান্য উপরে। তবে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন বর্তমান হার তার খুব কাছাকাছি।
অভিবাসনের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ লাখ। তাদের এক তৃতীয়াংশ ইউরোপীয়, যারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য এবং সদস্য নয় এমন দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে গেছেন। মোটের ওপর সবচেয়ে বেশি অভিবাসী গেছেন আলজেরিয়া থেকে। তার পরেই রয়েছে মরক্কো এবং পর্তুগাল।
দক্ষিণপন্থী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোট হয় গত ১০ এপ্রিল। সেই ভোটে এগিয়ে ছিলেন এমানুয়েল ম্যাখোঁ৷ তার পরের অবস্থানে ছিলেন মারিন লা পেন। তবে ভোটের ব্যবধান কম থাকায় অনিশ্চয়তা ছিল। গতকাল রোববার ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটে মুখোমুখি হন তারা।
বিবিসি
মন্তব্য