-->

রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইইউ’র যত বাধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইইউ’র যত বাধা
রাশিয়ার তেল কারখানা (ফাইল ছবি)

রাশিয়ার ইউক্রেন দখলচেষ্টা ও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নিন্দা জানিয়ে দেশটির ওপর একাধিক ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এখন চলছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে রাশিয়ার তেল রপ্তানির ওপরে নিষেধাজ্ঞার চেষ্টা। অবরোধের এই ষষ্ঠ প্যাকেজ নিয়ে সোমবার (১৬ মে) বৈঠকে বসলেও ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ এ বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। হাঙ্গেরিসহ তিনটি দেশের আপত্তির মুখে অবরোধে সফল হয়নি ইইউ। আলাপ শেষ হয়ে যায়নি তবে শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ সফল নাও হতে পারে।

রাশিয়ার তেল ইউরোপে বিক্রিচেষ্টায় বাধা, অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার যে চেষ্টা চলছে তাতে সবচেয়ে বড় আপত্তি জানিয়েছে হাঙ্গেরি। ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই প্রস্তাবে আপত্তি তুলে হাঙ্গেরি বলেছে সমুদ্রসীমা না থাকায় তারা ভূমিবেষ্টিত। তাদের সম্পদ সীমিত এবং তারা তেলের জন্য পরনির্ভরশীল।

আরো ভয়ের কথা, তাদেরই প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন-যেখানে আগ্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে রাশিয়া। হাঙ্গেরিকে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরো দুটি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া। এসব দেশকেও জ্বালানি তেলের জন্য পরমুখাপেক্ষী থাকতে হয় এবং নিকটবর্তী রাশিয়াই তাদের তেল পাওয়ার সবচেয়ে বড় উৎস। স্লোভাকিয়াও ইউক্রেন ও হাঙ্গেরির প্রতিবেশী দেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি অনুযায়ী সবগুলো দেশ একমত হতে না পারলে ঐকবদ্ধ্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। অবরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এই মতানৈক্য অত্যন্ত জরুরি। এ কারণে হাঙ্গেরিসহ তিনটি দেশের বিরোধিতা ভাবাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশনকে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ষষ্ঠ প্যাকেজে দেশটি থেকে ইউরোপে ঢোকা জ্বালানি তেলের ওপর অবরোধ আরোপের যে চিন্তা ইইউ করছে তাতেই হাঙ্গেরির এই ভেটো।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরো জোরদার করতে গত ৪ মে সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর কাছে রাশিয়ার তেল আমদানি নিষিদ্ধের একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে ইউরোপীয় কমিশন। এরপরই এই প্রতিক্রিয়া দেখায় হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া।

সোমবার (১৬ মে) এ বিষয়ে ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে ইইউ’র বৈদেশিক নীতি বিষয়ক শাখার প্রধান ও ওই বৈঠকের সভাপতি যোসেফ বোরেল এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘ইউনিয়নভুক্ত কিছু সদস্য তেল অবরোধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ, তারা অন্যদের ওপর নির্ভরশীল ও ল্যান্ডলক্ড।’

‘এ পরিস্থিতি উত্তরণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না, কারণ যারা বিরোধিতা করেছে তাদের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত,’ বলেন তিনি।

ওই বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হাঙ্গেরি যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে সেজন্য আর্থিক সহায়তা এবং আরও সময় দাবি করেছে।

এসময় কিছু সদস্য দেশ হাঙ্গেরির অবস্থানের তীব্র বিরোধিতা করেন।

বিষয়টি নিয়ে হাঙ্গেরির তীর্যক সমালোচনাও করেছেন লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস। তিনি বলেছেন, ‘পুরো ইউনিয়ন একটি সদস্য রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।’

তার দাবি, হাঙ্গেরি এবং অন্যান্য দেশগুলিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছিল।

সদস্য না হলেও বিপর্যয়ের শিকার ইউক্রেনও এই বৈঠকে অংশ নেয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবাও আলোচনায় অংশ নেন এবং নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ দফায় তেল নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করেছেন যে ব্লকটি চুক্তিতে না পৌঁছালে রাশিয়াকে উদযাপনের কারণ তৈরি করে দেবে।

অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ রাশিয়ার তেলে অবরোধের বিষয়ে এখনও আশা ছাড়েননি। তিনি ‘পরবর্তী দিনগুলিতে’ ঐকমত্য আশা করছেন।

লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন অ্যাসেলবর্নও আশাবাদী যে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ আরোপ করা হবে। তিনি বলেছেন, ‘ব্লকের আরো সময় প্রয়োজন।’

সূত্র: এপি, ডয়েচে ভেলে

মন্তব্য

Beta version