সুপারমার্কেট থেকে কিছু কিনেছেন? তাহলে এমন সম্ভাবনা খুবই বেশি যে তার মধ্যে কিছুটা পাম অয়েল আছে। কোথা থেকে এই পাম তেল এসেছে-খোঁজ নিয়ে দেখুন। দেখবেন এই তেল এসেছে পামগাছের ক্ষেত থেকে এবং সেই ক্ষেতটি হয়তো ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানকারই কোনো একটি কোম্পানি হয়তো এই পাম তেল বিক্রি করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন, কেলোগ'স বা মোন্ডেলেজের মতো বিশ্বের নামজাদা প্রতিষ্ঠানের কাছে।কিন্তু এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে এই কোম্পানিগুলো ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোকে কোটি কোটি ডলারের আয় থেকে বঞ্চিত করছে।
শিকার করতে বেরিয়েছেন মাত ইয়াদি। নদীর পার ধরে চলেছেন তিনি-হাতে বর্শা, আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আজ কিছুই পেলেন না তিনি। প্রায়ই এমন হয়।
'আগে এখানে প্রচুর শূকর, হরিণ আর সজারু পাওয়া যেতো,' বলছিলেন মাত ইয়াদি- 'আজকাল এখানে কোন জীবিত প্রাণীই দেখা যায় না।'
তিনি হচ্ছেন ওরাং রিম্বা উপজাতির লোক। ইন্দোনেশিয়ায় যেসব যাযাবর জনগোষ্ঠী এখনো টিকে আছে তাদের একটি এই ওরাং রিম্বা। তারা সুমাত্রা দ্বীপের এই জঙ্গলে বাস করছেন বহু প্রজন্ম ধরে। তাদের পেশা রাবার চাষ, ফল কুড়ানো এবং শিকার।
তাদের বাড়ি যে প্রত্যন্ত এলাকায় তার নাম টোবিং টিঙ্গি। ১৯৯০ এর দশকে এখানে আসে একটি পাম অয়েল কোম্পানি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল-তারা এখানে প্রাচুর্য আর উন্নয়ন নিয়ে আসবে। তারা এই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের জমির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
ওরাং রিম্বার লোকেরা বলেন, কোম্পানি বলেছিল এখানে পাম তেলবীজের গাছ লাগানো হবে এবং এর বিনিময়ে তারা অর্ধেকের বেশি জমি ফেরত পাবে।
বলা হয়, এই পাম তেলবীজ হচ্ছে এক বিস্ময়কর ফসল-সারা বিশ্ব জুড়ে যার চাহিদা বাড়ছে। এতে ওরাং রিম্বার লোকদের সব দিক থেকেই লাভ হবে, কারণ তারা পামগাছ থেকে যে তেলবীজ উৎপাদন করবে তা কোম্পানিই কিনে নেবে।
পরের ২৫ বছর ধরে এই পাম তেল গাছ তরতর করে বেড়েছে। তার উজ্জ্বল কমলা রঙের ফলে বিপুল সম্ভার গেছে কোম্পানির কারখানায়-তা থেকে উৎপাদিত হয়েছে কোটি কোটি ডলার দামের পাম অয়েল নামের খাবার তেল। এই তেলের মালিক সেলিম গ্রুপের কাছ থেকে তা কিনে নিয়েছে ক্যাডবেরি চকলেট, পপ টার্ট বা ক্রাঞ্চি নাট ক্লাস্টার্স প্রস্তুতকারক বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু মাত ইয়াদির উপজাতিকে যা দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার কিছুই তারা পায়নি।
তার পরিবার এখন একটি পাম ক্ষেতের ভেতরেই একটি কুঁড়েঘরে বাস করে।
তিনি বলেন, 'আমরা কিছুই ফেরত পাইনি, ওরা সব নিয়ে নিয়েছে।'
ওরাং রিম্বা উপজাতির একজন প্রবীণ সদস্য সিতি মানিনাহ। পাম গাছ থেকে ফসল তোলার সময় মাটিতে যেসব ছোট ছোট ফল পড়ে থাকে সেগুলো কুড়িয়ে কোনোমতে জীবন চালান তিনি।
যেদিন কপাল ভালো থাকে সেদিন তিনি এতো ফল কুড়ান যে তা দিয়ে তার পরিবারের একদিন খাওয়ার মতো কিছু চাল আর শাকসবজি কেনার পয়সা ওঠে তার।
সিতি মানিনাহ বলেন, 'খুব বেশি কিছু নয়, কিন্তু যথেষ্ট।'
ইন্দোনেশিয়ার একজন পার্লামেন্ট সদস্য ড্যানিয়েল জোহান। এমপি হিসেবে তিনি কৃষি ও বন খাতের তত্বাবধান করেন। তিনি বলেন,' এটি একটি উদাহরণ মাত্র, সবখানেই এমন হচ্ছে। করপোরেশনগুলো খুবই লোভী।'
বনভূমি উজাড় করে পাম তেলবীজের আবাদ
এই পাম গাছের আবাদ করার জন্য বিস্তীর্ণ সব বনভূমি উজাড় করা হয়েছে। যে বন কেটে সাফ করা হয়েছে তা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনভূমির অন্যতম।
একসময় ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও এবং সুমাত্রা দ্বীপ ঘন বনে ঢাকা ছিল। এখন সেখানে মাইলের পর মাইল ধরে পামগাছের ক্ষেত।
এই বনভূমি ধ্বংসের বিনিময়ে দেয়া হয়েছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি-যাতে সরকারের অর্থায়ন এবং স্থানীয় জনসমর্থন পাওয়া যায়।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে ভাগাভাগির অঙ্গীকার
কোম্পানিগুলো অনেক ক্ষেত্রে অঙ্গীকার করেছিল যে তারা এসব পাম ক্ষেত গ্রামবাসীদের সাথে ভাগাভাগি করে নেবে। এই প্লটগুলো বলা হতো প্লাজমা।
ইন্দোনেশিয়ায় ২০০৭ সালে একটি আইন করা হয়-যার ফলে যে কোনো নতুন আবাদ তৈরি করতে হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তার এক পঞ্চমাংশ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
যেসব জায়গায় এই ব্যবস্থা ঠিকমত কাজ করেছে-সেখানে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীগুলো দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী ৫০০০ কোটি ডলারের ব্যবসা করে এমন এক শিল্পে অংশীদার হতে পেরেছে তারা। কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠতে থাকে যে অনেক কোম্পানিই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে নি, প্লাজমা দেবার আইনী বাধ্যবাধকতা রক্ষা করেনি।
এই সমস্যা ঠিক কতটা ব্যাপক তা জানা যায় না। সে কারণে গত দু'বছর ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠান দি গেকো প্রজেক্ট এবং পরিবেশ বিষয়ক ওয়েবসাইট মোঙ্গাাবে মিলে এ ক্ষেত্রে ঠিক কি হচ্ছে তা বের করার উদ্যোগ নেয়।সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তদন্তে জানা যায় যে, শুধুমাত্র বোর্নিওর মধ্য কালিমান্টান প্রদেশেই কোম্পানিগুলো ১ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি প্লাজমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে-যা একটি আইনী বাধ্যবাধকতা ছিল।
স্থানীয় মানুষেরা কীভাবে বঞ্চিত হয়েছেন
আমরা মুনাফার আনুমানিক হিসেবগুলো পরীক্ষা করে অনুমান করি যে এর ফলে জনগোষ্ঠীগুলো প্রতি বছর কম করে হলেও ৯ কোটি ডলার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার কর্পোরেট-পরিচালিত পাম আবাদের ক্ষেত্রর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে এই প্রদেশে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপাত্ত পরীক্ষা করে আভাস পাওয়া যায় যে, অন্যান্য পাম অয়েল-উৎপাদনকারী প্রদেশগুলোতেও চিত্রটা মোটামুটি একই রকম। এবং এই বঞ্চনার ফলে ইন্দোনেশিয়া জুড়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী যে পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছে তার পরিমাণ শত শত কোটি ডলার হবে।
শুধু যে সরকারি উপাত্তেই সমস্যার এই ব্যাপকতা দেখা যায় তা নয়।
যেসব কোম্পানি তাদের পাম ক্ষেতগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে ভাগাভাগি করতে ব্যর্থ হয়েছে বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে-তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছে আমাদের দল।
এতে দেখা যায়, প্লাজমা নিয়ে ক্ষোভ থাকার কারণে গত ছয় বছরে গড়ে প্রতি মাসেই বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভ দমনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কখনো কখনো দ্রুত এবং সহিংস পন্থা নিতে পারে।
২০১৫ সালে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি হয় - যাতে সেলিম গ্রুপ একটি লিখিত অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করে। এতে ওরাং রিম্বাকে প্লাজমা দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের কড়া দমননীতি
কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এটা হয়নি। ততদিনে এই উপজাতিটির প্রতীক্ষার দুই দশক পেরিয়ে গেছে।
হতাশ উপজাতীয়রা ওই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেতটি দখল করে নেয়, কিন্তু কোম্পানি তাদের কুঁড়েঘরগুলো ভেঙে দেয়। গ্রামবাসী তখন ক্ষেতের ভেতরে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, কোম্পানির অফিসের জানলা ভাঙচুর করে।
এরপর ৪০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্যাতন করা হয়।
একজন বলেন, 'কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আমাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।'
এরপর সাতজনকে ভাঙচুরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেয় হয়।
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকার করে।
এই বিক্ষোভের অল্পদিন পরেই অন্যান্য আইনপ্রণেতাদের সাথে তেবিং তিঙ্গি সফর করেছিলেন ড্যানিয়েল জোহান। তিনি বলেন, তাদের এই প্রতিরোধ আন্দোলনে অনেক সময় প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।
বিক্ষোভের পর পার্লামেন্টের একটি কমিশন সেলিম গ্রুপকে ওরাং রিম্বার পূর্বপুরুষের ভুমি ফিরিয়ে দেবার আহ্বান জানায়। কিন্তু পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়নি।
সেলিম গ্রুপ এবং তাদের যে সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি এই আবাদক্ষেত্রটি নিয়ন্ত্রণ করে-তারা সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়নি।
সরকার এক্ষেত্রে মূলত মধ্যস্থতার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু একটি জরিপে দেখা গেছে মাত্র ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে এই মধ্যস্থতার ফলে কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় প্রদেশ হচ্ছে রিয়াও। এখানকার প্ল্যানটেশন অফিসের প্রধান সামসুল কামার।
তিনি বলছেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তিনি প্লাজমা নিয়ে নতুন নতুন অভিযোগ পাচ্ছেন।
তার নজরদারির আওতায় আছে মোট ৭৭টি কোম্পানি এবং তাদের মধ্যে খুব সামান্য কয়েকটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোকে কিছু দিচ্ছে।
তবে তিনিও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা ছাড়া আর কিছু করেননি।
বড় কোম্পানিগুলো কী বলছে
বেশিরভাগ বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদক কোম্পানিই তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে 'শোষণ' উচ্ছেদ করার অঙ্গীকার করেছে।
কিন্তু আমরা কোলগেট-পামঅলিভ এবং রেকিটসহ ১৩টি বড় ফার্মকে চিহ্নিত করেছি যারা এমন সব উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পামঅয়েল কিনেছে-যারা গত ৬ বছর ধরে প্লাজমা নিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোকে বঞ্চনা করে আসছে।
ওরাং রিম্বা জনগোষ্ঠীর জায়গার ওপর গড়ে তোলা পাম ক্ষেতের মালিক যে সেলিম গ্রুপ-তাদের কাছ থেকে পাম অয়েল কেনে জনসন অ্যান্ড জনসন এবং কেলোগ'স কোম্পানি।
আমাদের তদন্তের জবাবে ফার্ম দুটি জানিয়েছে-তাদের সরবরাহকারীদের আইন মেনে চলতে হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি যে অনেকের সাথেই এমন কোম্পানির সরবরাহ ব্যবস্থার যোগাযোগ আছে-যাদেরকে এমনকি ইন্দোনেশিয়ার সরকারী কর্মকর্তারাও প্লাজমা সংক্রান্ত আইনকানুন মেনে চলতে ব্যর্থতার জন্য চিহ্নিত করেছেন।
জনসন অ্যান্ড জনসন, কেলোগ'স এবং মোন্ডেলেজ - এরা সবাই বোর্নিওর এমন একটি ক্ষেত থেকে পাম অয়েল সংগ্রহ করেছে যেটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আইনী বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে ব্যর্থ হবার জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
রাজনীতিবিদ জায়া সামায়া মনোং এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ওই ক্ষেতটি থেকে ট্রাক বেরুনোর পথ বন্ধ করতে পুলিশ বসিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, তাদের ক্ষতি হয় এমন কোন শক্ত পদক্ষেপ না নেয়া হলে, তারা ভাবতেই পারে যে তারা এসব উপেক্ষা করতেই পারে।'
জনসন অ্যান্ড জনসন বলেছে যে, তারা এসব অভিযোগ খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকে এবং তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
কেলোগ'স বলছে, তারা এসব অভিযোগ তদন্ত করবে এবং তাদের সরবরাহকারীদের সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।
ক্যাডবেরির মালিক মোন্ডেলেজ বলেছে, তারা এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে কী করা যায় তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করেছে ।
রেকিট বলেছে, এই তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলোর ব্যাপারে আরো তদন্ত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।
কোলগেট-পামঅলিভ বলেছে, তাদের সরবরাহকারীরা যথেষ্ট প্লাজমা দিচ্ছে কি না তা যাচাই করার জন্য তারা একটি প্রক্রিয়া বের করবে।
বোর্নিওর ক্ষেতটির পেছনে যে বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি আছে সেটি হলো গোল্ডেন এ্যাগ্রি-রিসোর্সেস । তারা ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় পাম অয়েল উৎপাদক এবং পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমি জুড়ে তাদের পামগাছের ক্ষেত রয়েছে।
কোম্পানিটি স্বীকার করেছে যে তারা প্লাজমা দেবার ক্ষেত্রে তাদের আইনী বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারেনি। তারা বলছে, তারা এটা করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ নিয়ে কাজ চলছে।
তারা বলছে, বোর্নিওতে তাদের যে ক্ষেত্রটি একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ বন্ধ করে দিয়েছিলেন সেটিতে আগামী বছর প্লাজমা বোনা শুরু করা হবে তারা আশা করছে।
'কোনো অজুহাত শুনতে চাই না'
গোল্ডেন এ্যাগ্রি-রিসোর্সেসসহ আরো যে কোম্পানিগুলোর সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি তারা বলছে, প্লাজমা স্কিমের জন্য যথেষ্ট জমি পাবার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
কিন্তু বোর্নিওর রাজনীতিবিদ জায়া বলছেন, তিনি গোল্ডেন এ্যাগ্রি-রিসোর্সেসকে বলেছেন যে তিনি চান কোম্পানিটি তাদের নিজেদের ভূমিই জনগোষ্ঠীগুলোর সাথে ভাগাভাগি করুক।
'আমি আর কোন অজুহাত শুনতে চাই না। কারণটা খুব সহজ। নিয়ম হচ্ছে প্রধান আবাদ ক্ষেত্রের পাশাপাশি প্লাজমা গড়ে তুলতে হবে। প্রধান ক্ষেত আছে কিন্তু প্লাজমা নেই - এমনটা কেন হবে?' বলেন তিনি।
সোমবার থেকে ইন্দোনেশিয়ার ভোজ্য তেল রপ্তানির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে এবং দেশটি থেকে সারা বিশ্বে পাম অয়েলের চালান নিয়ে জাহাজগুলোর যাত্রা আবার শুরু হবে।
ইন্দোনেশিয়ায় ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে গত মাসে এর রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ধনীরা
সারা পৃথিবীতে পাম অয়েলের মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো ব্যাপক মুনাফা করেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় শীর্ষ ধনীদের তালিকার অনেকেই পাম অয়েলের ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন।
গোল্ডেন এ্যাগ্রি-রিসোর্সেসের কর্ণধার উইডজাজা পরিবার ফর্বস-কৃত ইন্দোনেশিয়ার ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে।
সেলিম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী এ্যান্থনি সেলিম আছেন তৃতীয় স্থানে।
কিন্তু এই প্রাচুর্যের অংশ পাবার যে আশা ওরাং রিম্বার ছিল-তার জন্য তাদের প্রতীক্ষা আজও শেষ হয়নি।
এই জনগোষ্ঠীর প্রবীণ নারী সিলিন।
তিনি একটি দেহাতি গান শোনালেন, যার কথাগুলোর অর্থ 'আমাদের নাতি-নাতনিদের স্বাস্থ্য ভালো হলেই আমাদের মন ভরে যায়। আমাদের নাতি-নাতনিরা যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে সে জন্য আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের জমি ফেরত চাই। আর কিছুই আমরা চাই না।'
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য