-->
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প

কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা; খাদ্য এবং আশ্রয়ের প্রবল সঙ্কট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা; খাদ্য এবং আশ্রয়ের প্রবল সঙ্কট
ছবি: বিবিসি

বুধবার আফগানিস্তানের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। দুই দশকের মধ্যে এটাই আফগানিস্তানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের পর যারা বেঁচে গেছেন তারা জানান, তাদের খাওয়ার কিছু নেই, থাকার জায়গা নেই। একই সঙ্গে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি পাকতিকা প্রদেশের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে জানাচ্ছেন, অনেক মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি-ঘরে খোঁজ করছেন তাদের নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কিনা।

আঘা জান নামে একজন ব্যক্তি তার ভেঙ্গে যাওয়া বাড়ির আবর্জনা সরিয়ে দেখছেন সেখানে কিছু আছে কিনা। তার চোখে পানি।তিনি বলেন, 'এটা আমার ছেলের জুতা'। জুতার উপরের ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বলেন তার তিনটা শিশু সন্তান এবং দুইজন স্ত্রী সবাই নিহত হয়েছেন কারণ ওই রাতে তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেন।

বুধবার যখন ভূমিকম্প হয় তখন আঘা জান দৌড়ে যান ঘরের মধ্যে 'কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নীচে'।

তিনি বিবিসিকে বলেন, 'আমার কিছুই করার ছিল না। আমি আমার চাচাতো ভাই-বোনদের ডাকতে গিয়েছিলাম সাহায্য করার জন্য কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বের করতে সক্ষম হলাম ততক্ষণে সবাই মারা গেছে।'

ভয়াবহ ক্ষতি

আঘা জানের বাড়ি বারমাল জেলায়। পাকতিকা প্রদেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলোর মধ্যে এই জেলা অন্যতম। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে আর আহত হয়েছে তিন হাজারের মতো মানুষ।

বারমালার এই স্থান থেকে সবচেয়ে কাছের বড় শহরের দূরত্ব তিন ঘণ্টার মতো। রাস্তা ধূলায় ভরা। আর প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার ফলে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পরেছে। কিছু মানুষকে তালেবানের সেনাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এখানকার বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িঘর মাটি এবং পাথর দিয়ে তৈরি। এবং সেগুলো ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবার স্বজন হারানোর শোকে বিহ্বল।

হাবিব গুল নামের আরেকজন ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানের করাচির বর্ডারের কাছে দিনমজুরের কাজ করেন। যখন তিনি এই ভূমিকম্পের কথা শোনেন তখন ছুটে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন তার ২০ জন আত্মীয় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন পৃথক পৃথক ঘরে ছিলেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আপনাকে কার নাম বলবো? আমার অনেক আত্মীয় নিহত হয়েছে। তিন বোন, বোনের সন্তানেরা, আমার সন্তান আরো ছোট শিশুরা মারা গেছে।’

সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক গ্রামবাসী তাদের ক্ষয়ক্ষতি কি পরিমাণ হয়েছে সেটা দেখাচ্ছেন। কারণ তারা আশা করছেন এর ফলে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের নাম যোগ করা হবে।

হাবিব গুল বিবিসিকে বলেছেন, ‘যদি বিশ্ববাসী আমাদের দিকে ভাইয়ের চোখ দিয়ে দেখে এবং সাহায্য করে, এখানে আমরা আমাদের জমিতে থেকে যেতে পারি। যদি তারা সাহায্য না করে তাহলে আমরা এই স্থান থেকে চলে যাবো।’

উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত

আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে কিন্তু সেগুলোতে এখন আর আহতদের বহন করা হচ্ছে না। বরং সেখানে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে।

তালেবানের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এখন যেটা প্রয়োজন শত শত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ঘর।

আঘা জান এবং তার বেঁচে যাওয়া একজন ছেলে মাটিতে খুঁটি পুঁতে তার উপরে একটা ছাউনি দিয়ে বসে আছেন। অন্যান্য পরিবারের লোকজন তাঁবুর নিচে বসবাস করছে।

আফগান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো এখন ক্ষয়ক্ষতির কি পরিমাণ হয়েছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখছে।

একই সঙ্গে তারা প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সেখানে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই সঙ্কট আরো বাড়ছে।

জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্ততে সাহায্য করছে এবং তারা সতর্ক করে বলেছে সেখানে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version