-->

গর্ভপাত আইন সংস্কার করছে জার্মানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গর্ভপাত আইন সংস্কার করছে জার্মানি
আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত, এমন পোস্টারে মিউনিখে প্রতিবাদ নারীর (ছবি : ডয়েচে ভেলে)

গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন সংস্কার করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জার্মান সরকার। বিদ্যমান আইনে গর্ভপাতের পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য দেয়া হলে চিকিৎসকদের ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান ছিল।

অন্তঃসত্ত্বার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলে বা ধর্ষণের ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আসেন না তারা। নইলে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিংয়ের পর গর্ভধারণের প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে (শেষ ঋতুস্রাব থেকে ১৪ সপ্তাহ) গর্ভপাত করা যেতে পারে। তবে অনেক বাধা রয়েছে।

জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ আইন সংস্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছে অর্থাৎ ডাক্তারদের এখন অতিরিক্ত তথ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো মামলার ভয় ছাড়াই গর্ভপাত সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবেন তারা।

আগের আইন অনুযায়ী, জার্মানিতে ডাক্তারদের বলার অনুমতি ছিল যে, তারা গর্ভপাতের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু আরো বিস্তারিত তথ্য জানানোর অনুমতি ছিল না।

জার্মানিতে গর্ভপাত বেআইনি। তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এর অনুমোদন রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করতে হবে এমনটাই বলে আইনে।

আইনমন্ত্রী মার্কো বুশমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে গর্ভপাত করাতে চান এমন নারীদের সচেতন করাটা চিকিৎসকদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করা হতো। এমনকি জরিমানাও দিতে হতো তাদের। নারীদের প্রতি অবিশ্বাস এবং ডাক্তারদের প্রতি অবিশ্বাসের সময় এবার শেষ।’

২২ বছর বয়সী ভেরেনা বলেন, 'আমি সত্যিই অনলাইনে তথ্য খুঁজে হয়রান হয়ে গিয়েছি। কোন চিকিৎসক গর্ভপাত করেন, তারা কোথায় বা কীভাবে এ কাজ করেন, তা জানতে সহজ কোনো উপায় ছিল না।'

জার্মানির বর্তমান সরকার জোট গড়ার সময়ই আইনটি সংস্কার করার পরিকল্পনা করেছে। এই নিয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে জোটের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। জার্মানির মধ্য-বাম সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি, সবুজ দল এবং মুক্ত গণতন্ত্রী দল এফডিপির জোট সরকার শুক্রবার সংসদে গর্ভপাত আইনে ২১৯-এ ধারা খারিজ করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে।

ক্রিস্টিনা হানেল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের গিসেন শহরের একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি ৩০ বছর ধরে গর্ভপাত করেছেন। ওয়েবসাইটে গর্ভপাত পরিষেবা উল্লেখ করায় তাকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ছয় লাখ টাকা জরিমানার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এই মামলার ফলে জার্মানিতে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘যদি এখন ২১৯-এ খারিজ করা হয়, জার্মানি রোগীদের জন্য তথ্য সরবরাহে ঠিক পদক্ষেপ করবে।’

পাঁচ বছর আগে ভেরেনা দেখেছিলেন তথ্য সহজে না মেলার অর্থ স্থানীয় ক্লিনিকে কল করার আগে কয়েক ঘণ্টা অর্থহীনভাবে অনুসন্ধান করা। তাকে নিজের এলাকার তিন জন ডাক্তারের মধ্যে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারপরে তিনি দেখতে পেলেন যে তথ্য পাওয়ার কোনো উপায় নেই যেমন: অস্ত্রোপচার করে গর্ভপাত এবং ঔষধের মাধ্যমে গর্ভপাতের পার্থক্য কী? পরবর্তী প্রক্রিয়াটি কেমন এবং সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলো কী কী?

ইয়ানা মায়েফের্ট নামে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জার্মানিতে ১০ জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে একজন গর্ভপাত সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার করেন। তারা এর বিরুদ্ধে এমনটা নয়। কারণটা হলো বাধা অনেক বেশি।'

মায়েফের্ট প্রজননের অধিকার সংক্রান্ত সংগঠন ‘ডক্টরস ফর চয়েস'-এর সঙ্গে যুক্ত। তার কথায়, ডাক্তার খুঁজে পেতে ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং বাভারিয়ার ক্যাথলিক অঞ্চলে। তবে, কয়েকটি বড় শহরেও পরিস্থিতি একইরকম । স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, স্টুটগার্টে একটি হাসপাতালেও গর্ভপাতের পরিস্থিতি নেই। মুনস্টার শহরে শেষ যিনি গর্ভপাতের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি ২০১৯ সালে অবসর নিয়েছেন। 

গর্ভপাতের হার কম

১৯৯৬ সালের পর থেকে জার্মানিতে গর্ভপাতের সর্বনিম্ন হার দেখা গিয়েছে ২০২১ সালে। ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের মতে, ২০২১ সালে প্রায় ৯৪ হাজার গর্ভপাত হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ কমেছে এবং এক দশক ধরে গর্ভপাতের হারের নিম্নমুখী প্রবণতারই অংশ।

মায়েফের্ট জানান, অনেক সময় এসব চিকিৎসকদের হেনস্তা করা হয়। তিনি নিজে বার্লিনে কখনো এর মুখোমুখি হননি।

তিনি বলেন, ‘বাভারিয়ার কিছু অংশে প্রতিবাদকারীরা সব সময় ক্লিনিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা রোগী এবং ডাক্তারদের জন্য সত্যি ভয়ঙ্কর৷'

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

মন্তব্য

Beta version