-->
মাহসা আমিনির মৃত্যু

চুল কেটে নারীদের প্রতিবাদ, পোড়াচ্ছেন হিজাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চুল কেটে নারীদের প্রতিবাদ, পোড়াচ্ছেন হিজাব

ইরান: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ মাহসা আমিনির মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দেশটির বাধ্যতামূলক হিজাব নীতি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর গ্ল্যামার ম্যাগাজিনের। ইরানের তথাকথিত নৈতিকতা রক্ষাকারী পুলিশ বা মোরাল পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সি মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেক ইরানি নারীই নিজেদের চুল কেটে ফেলছেন। সেসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে মাহসা ইরানের রাজধানী তেহরান সফর করছিলেন।

গাশত-ই এরশাদ (গাইডেন্স পেট্রোল) বা মোরাল পুলিশ তখন মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অভিযোগ ছিল, মাহসার সামনের দিকে চুল হিজাবের বাইরে দৃশ্যমান ছিল। এ গাশত-ই এরশাদ হলো ইরানের বিশেষ পুলিশ ইউনিট যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইসলামিক নৈতিকতার সম্মান নিশ্চিত করা এবং ‘সঠিকভাবে’ পোশাক না পরা ব্যক্তিদের আটক করা। মাহসাকে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান এবং তিন দিন পরে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু পুলিশ তার মৃত্যুর সব দায় অস্বীকার করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা মেয়েটিকে লাঠিপেটা করে মাথায় আঘাত পেতে দেখেছেন। তেহরান পুলিশের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে মাহসা আমিনি। যদিও তার বাবা ইতোমধ্যে ইরানি গণমাধ্যমের কাছে বলেন, আমিনির কোনোপ্রকার শারীরিক সমস্যা ছিল না; একদম সুস্থ ছিল সে। অন্যদিকে বৃহত্তর তেহরানের পুলিশ কমান্ডার হোসেন গাশত-ই এরশাদ কর্তৃক আমিনির ক্ষতি বা আঘাতের কথা অস্বীকার করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা বা অনুপযুক্ত আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

ইরানে নারী স্বাধীনতা : আমিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পুরো ইরান। নারীরা তাদের চুল কাটছে, জনসমক্ষে হিজাব পোড়াচ্ছে, এবং গণবিক্ষোভের মঞ্চে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগানে ফেটে পড়ছে তারা। জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটকে বিক্ষোভের এসব ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। টিকটকের এক ভিডিওতে দেখা যায়, নারীরা রাস্তায় তাদের হিজাব পুড়িয়ে ফেলছে। এ সময় তাদের সঙ্গে অনেক পুরুষ বিক্ষোভকারীকেও দেখা যায়। আরেকটি ভিডিও সংকলনে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ইরানের নারী-পুরুষ মিলে নিজেদের চুল কেটে ফেলছে। ভিডিওর নিচে বার্তার ঘরে লেখা, ‘হিজাবের জন্য পুলিশি হেফাজতে ২২ বছর বয়সি মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানিরা চুল কেটে ফেলছে।’ তেহরানে বিক্ষোভের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নারীরা তাদের হিজাব বাতাসে দোলাচ্ছে। তাদের মধ্যেই অনেকে স্লোগান দিচ্ছিল, ‘হেডস্কার্ফ আর পাগড়িকে ‘না’, স্বাধীনতা আর সাম্যকে ‘হ্যাঁ’।’ দেশটিতে হিজাববিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে- খবর রয়টার্সের। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইসফাহান, কারাজ, মাশহাদ, রাশত, সাক্কেস এবং সানন্দাজসহ পুরো ইরানজুড়েই।

মোরাল পুলিশিংয়ে যে বর্বরতার শিকার ইরানের নারীরা : গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ মাহসা আমিনির মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দেশটির বাধ্যতামূলক হিজাব নীতি বাতিলের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মাহসা আমিনির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং তার ওপর যে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, অবিলম্বে তা নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত। সেইসঙ্গে নিহতের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায় এবং সত্যের কাছে পৌঁছাতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ‘যারা হিজাব নীতি মেনে চলবে না, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা, হয়রানি এবং আটক করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে,’ যোগ করেন নাদা আল-নাশিফ।

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version