আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। বেশ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে- ১৯৭০'র দশকের পর থেকে থেকে সেখানে দ্রব্যমূল্য কখনো এতোটা বাড়েনি।
মুদি দোকানে যেসব জিনিসপত্র বিক্রি হয়, সেগুলোর দাম গত এক এক বছরে ১৩.৫ শতাংশ বেড়েছে।
আসছে নভেম্বরে আমেরিকায় মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই অবস্থায় মানুষ এখন যে বেতন পাচ্ছে, সেটি দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মেলাতে পারছে না।
বর্তমানে আমেরিকায় এক কার্টন ডিমের দাম তিন ডলারের বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি ৩১৩ টাকার মতো)। ২০২১ সালের শুরুর জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন এর দাম ছিল এখনকার চেয়ে অর্ধেক।
গরু এবং মুরগির মাংসের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া এক গুচ্ছ কলার দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ৭৮ বছর বয়সী এড্ডা চার্বন বিবিসিকে বলেছেন ‘এটা খুব কঠিন সময়।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে- জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করে করোনাভাইরাস মহামারির সময়, যখন মানুষ রেস্টুরেন্টে খাওয়া ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল এবং মুদি দোকানের জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ে। তাছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যহত হয়।
উৎপাদনের জন্য কোম্পানিগুলোর যে অতিরিক্ত খরচ হয়, সেটি তারা ভোক্তাদের উপর ঠেলে দিয়েছে। যেমন তাদের মজুরি বাড়াতে হয়েছিল এবং জ্বালানির দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
এরপর চলতি বছরে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে সার, গম এবং অন্যান্য শস্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে শস্যের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। অন্যদিকে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়ার জন্য ডিমের সরবরাহ কমে যায়।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জেসন লাস্ক বিবিসিকে বলেছেন-‘ভবিষ্যত খুব অনিশ্চিত।’
আমেরিকানরা ধারাবাহিকভাবে বলছে, অর্থনীতি এবং মূল্যস্ফীতি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপর অসন্তুষ্ট ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা আরো বেশি অসন্তুষ্ট।
টেক্সাসে বসবাসরত ৩৬ বছর বয়সী রোমিশা লোয়ারি বলেছেন জো বাইডেন ভালো কাজ করেননি। সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য, গ্যাস এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবার কারণে তার পরিবার ফুড প্যান্ট্রিতে গিয়ে সাহায্য চাইতে হয়েছে।
রোমিশা লোয়ারি বলেন, গত দুই বছরে আমার মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের সময় আমরা যতটা গরীব ছিলাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি গরীব হয়ে গেছি।
দাম কমানোর জন্য মি. বাইডেন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। গ্যাসের দাম কমিয়ে আনার জন্য আমেরিকার তেলের রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল ছাড় দিয়েছেন তিনি। খাদ্য-পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন মাংসের বাজারে প্রতিযোগিতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে সার কিনতে পারে, সেজন্য তাদের সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য আইন প্রণয়নের মতো পদক্ষেপ হয়তো রাজনৈতিকভাবে ভালো হতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন আইন প্রণয়ন করে মূল্যস্ফীতির কোন প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা মূল্যস্ফীতির বিষয়টিকে তাদের বিজয়ের জন্য একটি ইস্যু হিসেবে দেখছেন।
নেব্রাস্কার রিপাবলিকান প্রতিনিধি একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। সেখানে দেখানো হচ্ছে যে তিনি তার স্ত্রীকে 'বাইডেন বার্গার' দিচ্ছেন। এটি ছোট আকারের, কিন্তু উচ্চ মূল্যের একটি বার্গার।
দ্রব্যমূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকেছে - সেটি বোঝানোর জন্য তিনি এটির নাম দিয়েছেন 'বাইডেন বার্গার'।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য