সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরাসরি আপত্তিকর লিংক সরানো, কনটেন্ট ব্লক করার মতো সক্ষমতা নেই দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির। সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষ বরাবর অনুরোধ পাঠিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা তাদের গাইডলাইন ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায়, এমন সব লিংক বা কনটেন্ট অপসারণ করে বাংলাদেশের অনুরোধ রাখার চেষ্টা করে। তবে বাংলাদেশ থেকে যেসব অনুরোধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কাছে যায় তার তিন ভাগের এক ভাগেরও কম অনুরোধে তারা সাড়া দেয়।
বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণ বা প্রদর্শীত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোর (ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, বিগো, লাইকি, ইমো ও টুইটার) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ করে। জানা গেছে, এরকম অনুরোধের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের কম আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণ বা প্রদর্শীত না হওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব আগে আমাদের অনুরোধে যে পরিমাণ সাড়া দিতো বর্তমানে তা বেড়েছে। এটা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
২০১৮ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে মন্ত্রীর সঙ্গে ফেসবুকের বৈঠকের পর থেকে অনুরোধে সাড়া দেয়ার এই হার বেড়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউসবসহ অন্য মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রীর নিয়মিত বৈঠক, যোগাযোগ হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দেয়ার হার আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
বিটিআরটির এক কমিশন বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সরকার ২০২০ সালে ফেসবুকের কাছে অপসারণের জন্য লিংক পাঠায় ১৫ হাজার ৮২৬টি, ফেসবুক লিংক অপরাসণ করে ৪ হাজার ১১৯টি। অপসারণের শতকরা হার ২৬.০৩।
২০২১ সালে ২৬ হাজার ৫৫৭ লিংক অপরসারণের জন্য অনুরোধ করা হলে ফেসবুক ৮ হাজার ৯১৬ লিংক অপসারণ করে। লিংক অপসারণের শতকরা হার ৩৩.৫৭। ২০২২ সালে ৩৭ হাজার ৩৪৫ লিংক অপসারণের জন্য ফেসবুককে পাঠালে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ১২ হাজার ৫১৯ লিংক অপসারণ করে। লিংক অপসারণের হার ৩৩.৫২।
২০২০ সালে ইউটিউবকে ১৬১ ভিডিও লিংক অপসারণের জন্য বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ পাঠানো হলে ৩১ লিংক অপসারণ করে। লিংক অপসারণের শতকরা হার ১২.২৫ শতাংশ। ২০২১ সালে ২ হাজার ৪৩ লিংক অপসারণের জন্য অনুরোধের বিপরীতে ১ হাজার ১৩ লিংক অপসারণ করা হয়।
লিংক অপসারণের শতকরা হার ৪৯.৫৮। ২০২২ সালে ৩ হাজার ৮৩২ লিংক অপসারণের জন্য ইউটিউবকে বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ পাঠানো হলে মাত্র ৩৯১ লিংক অপসারণ করে। লিংক অপসারণের শতকরা হার ১০.২০ শতাংশ।
২০২১ সালে টিকটকের ৯ লিংক অপসারণের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৫ লিংক অপসারণ করে। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮৭ লিংক অপসারণের অনুরোধ জানালে ২ হাজার ১৯ লিংক অপসারণ করা হয়। ২০২২ সালে বিগো, লাইকি ও ইমোর ৭০টি লিংক অপসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ জানালে সবকটি লিংকই অপসারণ করে সংশ্লিষ্টরা। ২০২২ সালে টুইটারের ২ হাজার ৪১৩ লিংক অপসারণের অনুরোধ জানানো হলে মাত্র ১৫২ লিংক সরানো হয়।
দেখা গেছে, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, বিগো, লাইকি, ইমো ও টুইটারের কাছে ৯৪ হাজার ৩৫৩ লিংক অপসারণের জন্য অনুরোধ জানানো হলে সংশ্লিষ্টরা ২৯ হাজার ২৩৫ লিংক অপসারণ করে। বাংলাদেশের অনুরোধের পর লিংক অপসারণের হার শতকরা ৩৩.৯৮ ভাগ।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপক্তিকর বা ক্ষতিকর কনটেন্ট শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমাদের দেশের অনুরোধের পরেও আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনের শর্ত ভঙ হয়নি বলে তা অপসারণ বা বন্ধ করছে না।
অনলাইন জুয়ার কথা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়, অনলাইন জুয়া বিশ্বের অনেক দেশে বৈধ হলেও সব ধরনের জুয়া খেলা প্রকাশ্য জুয়া আইন-১৮৬৭-এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু গৃহীত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনের শর্ত ভঙ হয়নি। প্রায়ই এ ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করার পরে বন্ধ বা অপসারণের অনুরোধ করা হলে তা বন্ধের হার শতভাগ নয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য