পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া তীব্র বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে।- বাসস
কেবিনেট বুধবার রাজধানীসহ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া এ দুটি প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সভাপতি ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে এ পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি লোক। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে ইমরান খানকে রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্ট চত্বর থেকে গ্রেফতারের পর অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়। পরে বুধবার তাকে পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ রুদ্ধ দ্বার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে শুনানি চলার সময় খানকে তার কৌঁসুলিদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। তবে রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে অনুষ্ঠিত এই শুনানির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
ইমরান খানের আইনজীবী আলী বুখারি জানান, আদালত ইমরান খানের আট দিনের শারীরিক রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। যদিও সরকারি কৌঁসুলিরা তার ১৪ দিনের রিমান্ড দাবি করেছিল।
তার অপর আইনজীবী আফজাল মারওয়াত জানান, ইমরান খান ভালো আছেন। তবে গ্রেফতারের সময়ে আধা সামরিক বাহিনী তার মাথায় ও পায়ে আঘাত দিয়েছে।
এদিকে তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ দফা বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা লাহোরে এক সেনা অধিনায়কের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে বিক্ষোভকারীরা সেনা সদর দপ্তরের প্রবেশ মুখ অবরোধ করেছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের খন্ড লড়াই শুরু হয়ে যায়।
পুলিশ বলছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দাঙ্গাকারীদের ধরার চেষ্টা করছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশজুড়ে এক হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সহিংস বিক্ষোভ সহ্য করা হবে না।
তিনি বলেন, ‘যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
এদিকে পাকিস্তানের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংযম প্রদর্শন এবং আইনের শাসন বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সকলকে সংযত থেকে সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘পাকিস্তাানে যেসব চ্যালেঞ্জ তা মোকাবেলা এবং দেশটি কোন পথে যাবে তা একমাত্র দেশটির জনগণই নির্ধারণ করতে পারে। সেটা করতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং আইনের শাসন বজায় রেখে।’
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে গত কয়েক মাস ধরে চলা একটানা রাজনৈতিক সংকট এবং চরম উত্তেজনার মধ্যেই ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ইমরান চার বছরেরও কম সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে তিনি যখন পাকিস্তানের ওয়াজিরাবাদ শহরে প্রচারণা করছিলেন, তখন তার পায়ে গুলি করা হয়। তিনি এই ঘটনার জন্য একজন ঊর্ধ্বতন সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দায়ী করেছিলেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে আদালতে আনা দুর্নীতির অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে সাবেক এই ক্রিকেট তারকার ক্ষমতায় ফেরা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। সম্ভবত তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে দাঁড়ানোর জন্য আজীবনের জন্য অযোগ্য হয়ে যাবেন।
চলতি বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য