যে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই মামলায় দুই সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ পিটিআইপ্রধানের দুই সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন এবং তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত আর কোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও আগের দিনই দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা বেআইনি ঘোষণা করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এ রায়ের পর মুক্তি পান ইমরান খান। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুলিশি প্রহরায় অবস্থান করেন পুলিশ লাইন্সের গেস্ট হাউসে। সেখান থেকে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন।
এর আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) ২ নম্বর আদালত কক্ষে প্রায় ১ ঘণ্টা বিলম্বের পর শুনানি শুরু হয়। তবে আদালত কক্ষে ইমরানের পক্ষে সেøাগান শুরু হতেই নামাজের বিরতি দিয়ে বেরিয়ে যান বিচারপতিরা। স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টা) বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেব ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজের বেঞ্চে শুনানি ফের শুরু হয়। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করা হয়। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গতকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন ইমরান খান। বিবিসি উর্দু জানায়, শুনানির ফাঁকে ইমরান খান যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তিনি সবকিছুর জন্য সরাসরি সেনাপ্রধানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যা কিছু ঘটছে, তার জন্য একজনই দায়ী, তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান।
এদিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর গ্রেপ্তারের হুমকির বিষয়ে জামিনের পর কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ফের গ্রেপ্তার করা হলে গোটা দেশে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। অন্যদিকে ইমরান খানকে মুক্তির নির্দেশ দেয়ার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল পিএমএলএন (পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ)। লাহোরসহ দেশের সব প্রধান শহরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। রায় ঘোষণার পরপরই দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে দলটি। সামা টিভির খবরে জানানো হয়, লাহোর, ফয়সালাবাদ, সারগোধা, গুজরানওয়ালা এবং কাসুর শহরে বিক্ষোভ আয়োজিত হবে। পাঞ্জাবের রাজধানীতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেবেন মরিয়ম নওয়াজ। পিএমএলএন খাইবার-পাখতুনখাওয়া, করাচি ও কোয়েটায়ও বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের পরবর্তী কৌশল কী হবে, তা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি শহরে বৈঠক করবে পিএমএলএনের স্থানীয় নেতারা।
এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্টে পৌঁছান দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে তিনি আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন করেন। একইসঙ্গে ইমরানের বিরুদ্ধে সব মামলা একত্রিত করা এবং তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত করা মামলাগুলোর বিবরণ দিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়ার আবেদনও জানানো হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার পর আদালতে হাজির হওয়ার পরপরই ইমরানকে তার বায়োমেট্রিক্সের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বায়োমেট্রিক শেষে তাকে আদালতে নেয়া হয়। এ আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই তাকে ৯ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের চারপাশে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর কয়েকশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
পিটিআইয়ের কর্মীদের জড়ো হওয়ার ডাক দেয়ার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সময় ভোরে ইসলামাবাদ পুলিশ জরুরি আদেশে রাজধানীতে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে পুলিশ ও রেঞ্জার্স কর্মকর্তাদের আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে এবং আদালতের গেটের সামনে কাঁটাতারের বেড়া দেখা গেছে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) বাইরের ফুটেজে দেখা গেছে, পিটিআই প্রধানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্লোগান দিচ্ছেন বিপুলসংখ্যক আইনজীবী। পিটিআই বলেছে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) শুনানির সময় সারা দেশ থেকে হাজার হাজার ‘শান্তিপ্রিয় পাকিস্তানি’ তাদের নেতার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইসলামাবাদে জড়ো হয়। পিটিআইয়ের দাবি, ‘শান্তিপূর্ণ’ সমর্থকরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ইসলামাবাদের জি-১৩ এর শ্রীনগর হাইওয়েতে জড়ো হয়।
পিটিআই নেতাদের গ্রেপ্তার অব্যাহত : ইমরান খান মুক্তি পেলেও পিটিআই নেতাদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। ইসলামাবাদ এবং লাহোরে অভিযান চালিয়ে দলটির সিনিয়র নেতা ড. শিরিন মাজারি ও আয়রন লেডি হিসেবে খ্যাত পাঞ্জাবের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. ইয়াসমিন রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে আসাদ উমর, ফাওয়াদ চৌধুরী, শাহ মেহমুদ কুরেশি, আলি মোহাম্মদ খান এবং সিনেটর এজাজ চৌধুরীসহ পিটিআইয়ের একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা বেআইনি ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত থেকে যত দ্রুত সম্ভব তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে ইমরান খানের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ১ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে হাজির করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো-এনএবি)।
তবে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, শুক্রবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) হাজির হতে হবে। শুনানিতে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মেনে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বানদিয়াল। প্রধান বিচারপতি বলেন, শুক্রবার হাইকোর্টের শুনানির আগ পর্যন্ত ইমরান খান পুলিশ লাইনসের গেস্ট হাউসে থাকবেন। তবে তাকে কোনো কয়েদি মনে করা যাবে না। মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার কারণেই পিটিআই প্রধানকে আদালতের হেফাজতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ইমরানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেছেন, সরকারকে অবশ্যই ইমরান খানের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশনা মেনে গতকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হন ইমরান খান।
ইমরানের সঙ্গে পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ : ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামাবাদ পুলিশ লাইন্সের রেস্ট হাউসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে যান তিনি। এ সময় তিনি ইমরান খানকে অভিনন্দন জানান এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। দ্য নিউজ জানায়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এ সময় ইমরানকে তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন। সূত্র জানায়, ইমরান পরে গিলগিট বাল্টিস্তানের (জিবি) মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে পাঠান। পরে তিনিও সেখানে আলোচনায় যোগ দেন এবং তারা মধ্যরাতের পর পর্যন্ত ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। এদিকে ইমরান খান বলেন, একজন চাকরিরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ শুধু অভিযোগই নয়, বাস্তবতা। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে বিদেশি এক মিডিয়া প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। ওই সাংবাদিক ইমরানকে জিজ্ঞাসা করেন- একজন চাকরিরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা।
বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা প্রশ্নে ইমরানের না : মিডল ইস্টার্ন নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খান বলেছেন, বিরোধীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা সম্ভব হবে না। কারণ তারা সংবিধানে বিশ্বাস করে না। প্রধান বিচারপতির পরামর্শের বিষয়ে এক সংবাদকর্মী তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইমরান মনে করিয়ে দেন, সংবিধান ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তারা (সরকার) তা এড়িয়ে যাচ্ছে। এখন সংবিধান মেনে চলা প্রয়োজন এবং এর পরে কীভাবে এগোনো যায় তা দেখা যাবে। একজন সংবাদকর্মী ইমরানকে লাহোরের ঊর্ধ্বতন সেনা কমান্ডারের বাসভবনে হামলার নিন্দা করবেন কিনা, জিজ্ঞাসা করেন। ইমরান তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যেহেতু তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না, তাহলে কীভাবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন।
ইমরান খান ও তার দল মিথ্যাবাদী পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, পিটিআই নেতৃত্ব দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গতকাল ফেডারেল মন্ত্রিসভায় দেয়া ভাষনে এসব কথা বলেন তিনি। বলেন, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ও তার দল মিথ্যাবাদী। সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ইমরান খানের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ বলেন, একাধিক জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার অভিযোগ মিথ্যা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ইমরানকে বলেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। দুর্নীতির মামলায় তিনি এমনটি বললেন। ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের (দ্বিচারিতা) কারণে পাকিস্তানে বিচার ব্যবস্থার মৃত্যু হয়েছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ফেডারেল কোয়ালিশনের কয়েকজন সদস্যের গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্মরণ করে বলেন, তাদের কোন উদারতা দেখানো হয়েছিল। নওয়াজের সঙ্গে অন্যায় হওয়ার কথা কেউ বলেনি। তিনি আরো বলেন, পিটিআইয়ের বিক্ষোভকারীরা আমাদের শহীদদের অসম্মান করেছে। আমাদের শত্রুরাও এমনটি করেনি।
ইমরানের জামিনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে সতর্কবার্তা দেশটির গোয়েন্দাদের : ইমরান খানের জামিনে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা দ্য ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শও দিয়েছে আইবি। শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদ পুলিশের চিফ কমিশনার নূর-উল-আমিন মাঙ্গেল এবং মহাপরিদর্শক ড. আকবর নাসির খানের কাছে একই চিঠির পৃথক দুটি অনুলিপি পাঠিয়েছে আইবি। সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘ইমরান খান নিয়াজি বহুদিন ধরে তার উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলছেন এবং তার বিভিন্ন বক্তৃতার জেরে সম্প্রতি রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে একাধিক দাঙ্গা হয়েছে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবারের বিক্ষোভে পাকিস্তানের সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইসলামাবাদ বিমানবন্দগামী সড়ক তারা বন্ধ রেখেছে, খাদ্যপণ্য সরবরাহের গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। এককথায় বলতে গেলে, জনবিক্ষোভের আবরণে একদল দুষ্কৃতকারী সেদিন ইসলামাবাদের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিল। ‘যদি ইমরান খান নিয়াজি জামিন পেয়ে যান, সেক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আরো ভয়াবহভাবে ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই রাজধানী পুলিশের প্রতি আইবির পরামর্শ, ইসলামাবাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আপনারা সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে ইমরান খান নিয়াজি বর্তমানে যেখানে রয়েছেন, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কঠিন ও নিশ্চিদ্র করুন।’
রায়ের সমালোচনায় মুখর পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীরা : ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা বেআইনি ঘোষণা করে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনায় মুখর পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীরা। তারা ইমরানের প্রতি প্রধান বিচারপতির পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আবার গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের দুনিয়া টিভিকে এ কথা বলেন তিনি। খবর আলজাজিরার। রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ইমরান খানকে আবার গ্রেপ্তার করব। আগামীকাল (শুক্রবার) তিনি যদি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান, তাহলে আমরা তা বাতিলের জন্য আবেদন করব এবং তাকে আবার গ্রেপ্তার করব। ’
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন জোটভুক্ত দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফে (পিটিআই) যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের সমালোচনা করে টুইট করেছেন পিএমএল-এন দলের প্রধান সংগঠক।
তিনি লিখেছেন, ‘জাতীয় কোষাগার থেকে ৬ হাজার কোটি রুপি লুটে নেয়া অপরাধীর সঙ্গে আজ দেখা করে প্রধান বিচারপতি আপ্লুত। এ অপরাধীকে (ইমরান খান) মুক্তি দিতে পেরে তিনি আরো বেশি খুশি হয়েছেন।’ ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানে চলমান বিক্ষোভের দায়ও প্রধান বিচারপতির ওপর চাপিয়ে তিনি বলেছেন, ‘(প্রধান বিচারপতি) বিক্ষোভে ঢাল হিসেবে কাজ করছেন এবং দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে উসকে দিচ্ছেন। আপনার উচিত প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানো এবং আপনার শাশুড়ির মতো করে পিটিআইতে যোগ দেয়া।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা আজম তারার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান বিচারপতি বন্দিয়ালের এখন সুপ্রিম কোর্টে ইমরান খানের দলের পতাকা উত্তোলন করা উচিত, নয়তো তার ঘোষণা করা উচিত যে আদালতটি ইমরানের দলের একটি সাব অফিস। টুইটারে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল ইমরানের পিটিআই সরকারের মেয়াদে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে কথিত দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘২০১৮-২২ সালেও যদি এমন সুপ্রিম কোর্ট থাকত!’ অন্যদিকে পিএমএল-এন নেত্রী হিনা পারভেজ বাট টুইটারে দাবি করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দেশের রাষ্ট্রীয় ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং কোটি কোটি রুপির ক্ষতি করেছে তাকে সুপ্রিম কোর্টের অতিথি বানানো অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার পর ৯ মে রাত থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন শহরে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষুব্ধ পিটিআই সমর্থকরা ১১ মে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের লাহোরের বাসভবনে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া সেনা কর্মকর্তাদের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছে। বিক্ষোভ থামাতে পিটিআই মহাসচিব আসাদ উমর, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশী, সাবেক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীসহ দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে রাজধানী ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনা নামানো হয়েছে। সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও প্রায় ১ হাজার ৮০০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও তবে ইমরানের মুক্তির নির্দেশের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করেছে।
গত ৯ মে দুটি মামলায় হাজিরা দিতে রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্টে যান ইমরান খান। হাইকোর্ট চত্বর থেকে তাকে আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে এনএবি। এরপর তাকে ইসলামাবাদের পুলিশ সদর দপ্তরের ভেতর এক বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। ইমরান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়। রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে অনুষ্ঠিত শুনানি শেষে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া তোষাখানা মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়। গত ১ মে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল এনএবি। এনএবির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত ওই পরোয়ানায় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েক জন জ্যেষ্ঠ নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি বরাদ্দ নেয়া হয়েছিল, সেখান থেকেও ইমরান ও বুশরা বিবি অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় পরোয়ানায়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য