টানা চার মাস ধরে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বিমান হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। স্থল পথেও সেনা অভিযান চলার কারণে ভূখণ্ডটিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমনকি বাড়িঘর হারিয়ে গাজার জনসংখ্যার বেশিরভাগই থাকছেন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও অস্থায়ী তাঁবুতে। এমন অবস্থায় নিরাপদ পানি না থাকলে আরও অনেক ফিলিস্তিনি মারা যাবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের একটি সংস্থা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ পানি না থাকলে, সংকট ও রোগের কারণে গাজায় আরও অনেক মানুষ মারা যাবে বলে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) রোববার জানিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় সংস্থাটি বলেছে, ‘আমাদের ইউএনআরডব্লিউএ টিম গাজার মানুষের কাছে প্রায় ২ কোটি লিটার পানি পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট নয়। নিরাপদ পানি না থাকলে আরও অনেক মানুষ সংকট ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।’
সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘অবস্থা অমানবিক। মানুষ কোনও ধরনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ ছাড়াই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।’ এদিকে এক্সে দেওয়া পৃথক এক বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ‘গাজা উপত্যকার বৃহত্তম মানবিক সংস্থা হিসাবে, আমরা গাজার জনগণকে সহায়তা করার জন্য আমাদের অপরিহার্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, গত মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের অস্থায়ী রায় সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় তার আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৭ হাজার ৩৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।
এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৬৬ হাজার ৬৩০ জন ফিলিস্তিনি। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য