আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্নায়ুযুদ্ধ এবং বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট নানা সংকটে এই দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এমনকি পৃথিবীর বাইরে মহাকাশেও আছে অঘোষিত প্রতিযোগিতা। এমন অবস্থায় এবার চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছে রাশিয়া। আর সেই কাজে রাশিয়ার সঙ্গী হবে চীন। রাশিয়া নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৩ থেকে ২০৩৫ সালে রাশিয়া এবং চীন চাঁদে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বিবেচনা করছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রোসকসমসের প্রধান ইউরি বোরিসভ। আর এই পথ ধরে কোনও একদিন চাঁদে বসতি নির্মাণের পথও খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউরি বোরিসভ অতীতে রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া এবং চীন যৌথভাবে একটি চন্দ্র কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে এবং ‘মহাকাশে পারমাণবিক জ্বালানির’ বিষয়ে দক্ষতার সাথে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে মস্কো।
বোরিসভ বলেছেন, ‘আজ আমরা একটি প্রকল্প গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। ২০৩৩-২০৩৫ সালের মধ্যে কোনও এক সময় আমরা আমাদের চীনা সহকর্মীদের নিয়ে একসাথে চাঁদের পৃষ্ঠে একটি বিদ্যুৎ ইউনিট সরবরাহ এবং ইনস্টল করার কথা বিবেচনা করছি।’
তিনি বলছেন, সৌর প্যানেলগুলো ভবিষ্যতের চন্দ্র বসতিগুলোকে শক্তি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে না। তবে এক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি সফল হতে পারে। সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রোসকসমসের এই প্রধান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি চ্যালেঞ্জ ... এটি স্বয়ংক্রিয় পন্থায় করা উচিত, মানুষের কোনও ধরনের উপস্থিতি ছাড়াই।’
এছাড়া বোরিসভ এদিন পারমাণবিক শক্তি-চালিত কার্গো স্পেসশিপ বা মহাকাশযান তৈরির বিষয়ে রাশিয়ান পরিকল্পনার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক চুল্লিকে কীভাবে ঠান্ডা করা যায় তার সমাধান খুঁজে বের করা ছাড়াও প্রকল্প সংক্রান্ত সমস্ত প্রযুক্তিগত প্রশ্নের সমাধান করা হয়েছে।
বোরিসভ বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি মহাকাশ টাগবোটে কাজ করছি। এই বিশাল, সাইক্লোপিয়ান কাঠামো পারমাণবিক চুল্লি এবং একটি উচ্চ ক্ষমতার টারবাইনের মাধ্যমে... এক কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে বড় কার্গো পরিবহন করতে, মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করতে এবং অন্যান্য অনেক কাজও করতে সক্ষম হবে।’
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ান কর্মকর্তারা একদিন চাঁদের পৃষ্ঠে খনন কাজের মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়ে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা ইতোপূর্বে বলেছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ান মহাকাশ কর্মসূচি বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
রাশিয়ার লুনা-২৫ মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এবং বিধ্বস্ত হওয়ার পর গত বছর দেশটির চাঁদে অভিযান ব্যর্থ হয়। এই অভিযান ছিল ৪৭ বছরের মধ্যে মস্কোর প্রথম কোনও চন্দ্র অভিযান। মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের কোনও ইচ্ছা নেই রাশিয়ার: পুতিন
রাশিয়া বলেছে, তারা আরও চন্দ্র অভিযান পরিচালনা করবে এবং তারপরে রাশিয়ান-চীনা ক্রুদের সমন্বয়ে যৌথ মিশন পরিচালনা এবং এমনকি চাঁদে ঘাঁটি নির্মাণের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখবে তারা। এর আগে চীন গত মাসে বলেছিল, তারা ২০৩০ সালের আগে প্রথম চীনা মহাকাশচারীকে চাঁদে পাঠাবে।
অবশ্য মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের কোনও ইচ্ছা রাশিয়ার নেই বলে গত মাসেই জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মহাকাশে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে সম্প্রতি যে অভিযোগ সামনে এসেছে সেটিকে পুতিন ‘পশ্চিমে উত্থাপিত হৈচৈ’ এর অংশ বলেও অভিহিত করেছেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য