আজ আর্ন্তজাতিক গুমবিরোধী দিবস। এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক সংস্থা জাতিসংঘের গুম এবং নির্যাতনবিষয়ক কনভেনশনে সই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় এতে সই করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশ মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইসব বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকার কূটনীতিকদের জানান, অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে খুবই সোচ্চার। যার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের গুম এবং নির্যাতনবিষয়ক কনভেনশনে দ্রুত সই করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থাকেও যথাযথভাবে কার্যকর করতে চায়। এ জন্য সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমলাদের মানবাধিকার সংস্থার দায়িত্ব না দিয়ে এই ইস্যুতে যারা সংগঠক (অ্যাক্টিভিস্ট) তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া বহুল সমালোচিত দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা এই আইনের যথাযথ সংশোধন করা হবে। মূলত মানবাধিকার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ছাড় দিতে নারাজ।
উল্লেখ্য, গত ১৬ বছরে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কত গুমের ঘটনা ঘটেছে তার তদন্তে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে সরকার। গত ২৭ আগস্ট ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ এর ক্ষমতাবলে এই কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নাবিলা ইত্রিস এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন। ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে কমিশন তদন্তকার্য সম্পন্ন করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
গুমবিরোধী সনদে যা আছে : গুমবিরোধী সনদে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই সনদের যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেটি দেখভালের জন্য জাতিসংঘের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি কাজ করে। ওই কমিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিবেদন যাচাই করে থাকে। সনদের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সনদের পক্ষভুক্ত কোনো দেশে যদি গুমের ঘটনা ঘটে, তবে ওই দেশের পরিস্থিতি দেখার জন্য কমিটি সদস্যরা সফরও করতে পারে। যদিও পক্ষভুক্ত অনেক দেশ এই অনুচ্ছেদটির শর্ত মেনে নেয়নি। সনদে মোট ৪৫টি অনুচ্ছেদ আছে। এতে জাতিসংঘের কোনো সদস্যরাষ্ট্র পক্ষভুক্ত হলে সনদের ‘এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ মেনে চলবে না’ বলেও তাদের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘকে জানাতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এই সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে; অর্থাৎ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ভারত শুধু এটি সই করেছে এবং তবে অনুস্বাক্ষর করেনি। অন্যদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের মধ্যে শুধু ফ্রান্স এটি অনুস্বাক্ষর করেছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য