-->

ভারতের মাথাব্যাথা মাওবাদী 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের মাথাব্যাথা মাওবাদী 

ভারতের ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৩৬ জন মাওবাদী সদস্য নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাজ্যটির দান্তেওয়াড়া জেলার অবুঝমার এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ২৪ বছর আগে ছত্তিশগড় রাজ্য গঠনের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর এটি অন্যতম বড় ও সফল অভিযান।

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে মাওবাদীদের বৈঠকের খবর পেয়ে দান্তেওয়াড়া এবং নারায়ণপুর থেকে স্পেশাল ট্রাস্ট ফোর্স (এসটিএফ) এবং ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি) এর প্রায় ১ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেয়।রাজ্য পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এই অভিযান শুরু হয়। আমাদের কাছে খবর ছিল পূর্ব বাস্তার ডিভিশন থেকে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ (মাওয়িস্ট) এবং ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’ (পিএলজিএ) নামে তাদের ৬ নম্বর কোম্পানির সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন জড়ো হয়েছিল। তারা সংখ্যায় অন্তত ৫০ জনের বেশি ছিল। এদের মধ্যে দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোন কমিটি মেম্বার কমলেশ, পিএলজিএ কমান্ডার নান্দু, নীতি, সুরেশ সালাম সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাওবাদী নেতা উপস্থিত ছিলেন।’

অভিযানে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে একে-৪৭, এসএলআর, ইনসাস রাইফেল, এলএমজি এবং .৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করেছে। দান্তেওয়াড়া জেলার পুলিশ সুপার গৌরব রায় জানান, ‘শুক্রবার বিকালের দিকে জেলা সদর শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গোভেল, নন্দুর এবং তুলতুলি-এই তিনটি গ্রামের ঘন জঙ্গলের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই তিনটি গ্রামই অবুঝমার সেক্টরের মধ্যে অন্তর্গত। আয়তনে গোয়া রাজ্যের সমতুল্য অবুঝমার মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, ৪০০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ এলাকা তারা মাওবাদীদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। নকশালবাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর এই ক্রমাগত লড়াই এবং সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে বিভিন্ন অভিযানে রাজ্যটির বাস্তার রিজিয়নে এখন পর্যন্ত ১৮৫ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ভারতের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশকে মাওবাদী মুক্ত করা।

জানা গেছে, একটি বড় মাওবাদী দলের উপস্থিতির খবর পাওয়া গিয়েছিল। তার পরই আলাদা আলাদা দলগুলোকে যৌথ অভিযানে পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দলগুলোকে ওর্চা ও বারসুর থানার অন্তর্গত গোভেল, নেন্দুর ও থুলথুলি গ্রামে পাঠানো হয়েছিল।তারা ওই গ্রামগুলোতে চিরুনি তল্লাশি চালায়। অবশেষে মাওবাদী দলের স্থান খুঁজে বের করে তারা।এনডিটিভির সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে নেন্দুর-থুলথুলির কাছে জঙ্গলের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ৩৬ জন মাওবাদী। অবশিষ্ট মাওবাদীদের খোঁজ করছে নিরাপত্তা বাহিনী। গভীর বনের মধ্যে তারা ঢুকে গিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। চরম সতর্কতা অবলম্বন করে, তাদের পেছনে ধাওয়া করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর দল। কর্তৃপক্ষের মতে, ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহের বিরুদ্ধে এই এনকাউন্টারটি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় একটি সাফল্য। প্রায় এক হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর দলকে এই মাওবাদীবিরোধী অভিযানে পাঠানো হয়েছে।

ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই বলেন, ‘আমাদের সাহসী সৈন্যদের এই বড় সাফল্য প্রশংসনীয়। আমি তাদের সাহসিকতা ও অদম্য মনোভাবকে কুর্নিশ জানাই। নকশালবাদকে নির্মূল করার জন্য আমাদের লড়াই তখনই শেষ হবে, যখন আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করব। এরই জন্য আমাদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার। রাজ্য থেকে নকশালবাদ নির্মূল করাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।’ তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিষয়ে ৯ মাসে দুইবার রাজ্য সফর করেছেন। তিনি ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নকশালবাদের অবসান ঘটাতে সংকল্প করেছেন।

উল্লেখ্য, ছত্রিশগড়ে মাওবাদীদের দমনে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসটিএফ ও ডিআরজি-এই দুই নিরাপত্তা সংস্থা। পুলিশের আইজি (বাস্তার রেঞ্জ) সুন্দররাজ পি জানিয়েছেন, অভিযানে চলাকালে গ্রেনেডশেল ফেটে ডিআরজি’র এক সদস্য আহত হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version