যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ফ্লিন্টে আরব আমেরিকান ও অন্য মুসলিম নেতাদের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনে ক্ষুব্ধ দেশটির আরব–আমেরিকান ও মুসলিম ভোটাররা। এ অবস্থায় তাঁদের সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টার অংশ হিসেবে ওই সাক্ষাৎ করলেন কমলা হ্যারিস।
মুসলিম ও আরব ভোটারদের সঙ্গে নিজের দূরত্ব কমাতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একাধিকবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কমলা হ্যারিস। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ভোটারেরা খোলামেলাভাবেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারেন তাঁরা। আর তা হলে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর একটি মিশিগানে কমলাকে মূল্য দিতে হতে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান, লেবানন, ফিলিস্তিনের সংঘাত নিয়ে চলা সংকট যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে মোকাবিলা করছে, তা নিয়ে আরব আমেরিকান ও মুসলিম নেতারা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। কমলাকে এসব যুদ্ধ থামাতে তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছু করা এবং এ অঞ্চল নিয়ে মার্কিন নীতি পুনর্র্নিধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
কমলার নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গতকালের বৈঠকে কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিনের গাজায় মানুষের দুর্দশা, বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ও লেবাননে সাধারণ মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে কীভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন কমলা। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাসের সংঘাতকে ঘিরে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা এড়ানোর প্রচেষ্টা নিয়েও তাঁরা আলাপ করেছেন।
মুসলিম আমেরিকান পরামর্শক গ্রুপ এমগেজ অ্যাকশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ায়েল আলজায়াত সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান, লেবানন, ফিলিস্তিনের সংঘাত নিয়ে চলা সংকট যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে মোকাবিলা করছে, তা নিয়ে আরব আমেরিকান ও মুসলিম নেতারা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। কমলাকে এসব যুদ্ধ থামাতে তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছু করা এবং এ অঞ্চল নিয়ে মার্কিন নীতি পুনর্র্নিধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ভোটারেরা খোলামেলাভাবেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারেন তাঁরা। আর তা হলে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর একটি মিশিগানে কমলাকে মূল্য দিতে হতে পারে। আলজায়াত আরও বলেন, ‘গাজা ও লেবাননে চলা সহিংসতার অবিলম্বে অবসান ঘটানোর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বোঝানোর চেষ্টা করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এমগেজ অ্যাকশন। এসব যুদ্ধের যে অবসান ঘটানো প্রয়োজন সে বিষয়ে তিনি (কমলা) একমত হয়েছেন।’
এদিকে, ‘আমেরিকান টাস্কফোর্স অন লেবানন’–এর প্রেসিডেন্ট এড গ্যাব্রিয়েল বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে চমৎকার মতবিনিময় হয়েছে। এসবের মধ্যে ছিল যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা, মানবিক সংকট কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সমর্থন প্রদান, লেবাননে প্রেসিডেনশিয়াল নেতৃত্বের শূন্যতা ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ইত্যাদি।
এড গ্যাব্রিয়েল আরও বলেন, ‘আমরা তাঁর (কমলা) পক্ষ থেকে বেশ সহানুভূতি লক্ষ করেছি। সামনে কী ঘটে, সেদিকে আমাদের নজর থাকবে। বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যেই ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুত্বে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে চাই। আগামী দিনগুলোতে আমাদের আরও দেখা–সাক্ষাৎ হবে।’
৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জনমত জরিপে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের এক জরিপ অনুযায়ী, এ দুই প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে আরব–আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন প্রায় সমান সমান।গত শুক্রবার কমলার বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার কমলার রানিং মেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) ও মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি অঙ্গীকার করেন, কমলা জিতলে তাঁর প্রশাসনে মুসলিমদের সমান অধিকার থাকবে।এরও একদিন আগে বুধবার কমলার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফিল গর্ডন আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছেন।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য