দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ব্লু হেলমেট)-এর সদর দপ্তরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দুইজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেওয়া ইউরোপীয় দেশগুলো এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।ইসরায়েল স্বীকার করেছে, তাদের সেনাবাহিনী ওই এলাকায় গুলি চালিয়েছে। তবে তাদের দাবি, হিজবুল্লাহর সশস্ত্র সদস্যরা জাতিসংঘের ঘাঁটির কাছে অবস্থান করছিল।
ইতালি ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুইদো ক্রোসেটো বলেছেন, এ ধরনের হামলা শুধু একটি ভুল নয়, এটি সহ্য করার মতো নয়। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে যে কোনো আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের কাছে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে ইতালি।
লেবাননে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলের একটি মেরকাভা ট্যাংক থেকে ছোড়া গোলা দক্ষিণ লেবাননের নাকুরায় তাদের সদর দপ্তরের একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আঘাত হানে। এতে দুইজন ইন্দোনেশীয় শান্তিরক্ষী আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা এয়ছে। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়।
ইন্দোনেশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হাড়ি প্রাবোও এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং শান্তিপ্রতিষ্ঠার মূল্যবোধের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই হামলা প্রমাণ করে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে ‘গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে এবং এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা প্রধান জ্যাঁ-পিয়ের লাক্রোয় নিশ্চিত করেছেন, লেবাননে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতির কারণে ৩০০ শান্তিরক্ষীকে এরই মধ্যে বৃহত্তর ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০ জনকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইউএনআইএফআইএল জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে বারবার সংঘর্ষবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে।
দক্ষিণ লেবাননে ইউএনআইএফআইএলের প্রায় ১০ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে।এছাড়াও লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য এই হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মধ্য বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২২ জন নিহত এবং আরও ১১৭ জন আহত হয়েছেন বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।বিবিসির সাংবাদিকরা দেশটির রাজধানীর ছোট শিয়া এলাকা বাচৌরাতে হামলার স্থান থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। পরে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে।
ইসরাইলি বাহিনী দাবি করে আসছে, লেবাননে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান পরিচালনার আগে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানায় তারা। তবে এটিকে ‘অকার্যকর এবং প্রতারণমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল মায়িদিন।
বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বড়সড় অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। অভিযোগ উঠেছে, ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে লেবাননের নিরীহ জনগণ।
এদিকে ইসলামিক জিহাদের প্রধানকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গত বৃহস্পতিবার মধ্য পশ্চিম তীরের নুর শামস শরণার্থী শিবিরে এক বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর নুর শামস ক্যাম্পের প্রধানকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং ছোট দোকানগুলোর একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় ২২ জন নিহত হয়।লেবাননের নিরাপত্তাসূত্র বলছে, ইসরাইল এর আগে ওই এলাকায় আক্রমণ করেনি। এমনকি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো সতর্কতাও জারি করেনি। বলা হচ্ছে, চলমান ইসরাইলি অভিযানে এটি মধ্য বৈরুতে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য