অভিভাবক হিসাবে এখন থেকেই সুরক্ষিত করুন শিশুসন্তানের ভবিষ্যৎ। শিশুদের জন্য এবার এসেছে পেনশন সিস্টেম। সৌজন্যে পেনশন রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেপলপমেন্ট অথরিটি। উদ্যোগটির নাম এনপিএস বাৎসল্য।
সঠিক লক্ষ্যে সঠিক পদক্ষেপ সবসময় সেরা ফল নিয়ে আসে, তা শিক্ষাক্ষেত্রেই হোক বা কর্মজীবন কিংবা শিশু সন্তানের ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং করা। অল্প বয়সী অভিভাবকরা, তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের পর, স্বভাবতই আনন্দে-স্নেহ-ভালবাসায় উচ্ছ্বসিত থাকেন। সেই আনন্দের আতিশয্যে তারা সদ্যোজাতর জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনেন, খেলনা কেনেন এমনকি সোনাও কেনেন। তারা তাদের সন্তানের নিরাপদ এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তখন থেকেই চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন, নানাবিধ পরিকল্পনাও করতে শুরু করে দেন।
ভারতের ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং বাজারে এবারই প্রথমবার, আঠেরোর নিচে বয়সিদের জন্য নতুন কোনো ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট নিয়ে এল পেনশন রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি। পণ্যের নাম এনপিএস বাৎসল্য। এক্ষেত্রে শিশু সন্তানের নামে তার বাবা বা মায়ের মধ্যে যে কোনো একজন অভিভাবক, সন্তানের স্বত্বভোগী (বেনেফিসিয়ারি) হিসাবে ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে (ই-এনপিএস) একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট খুলবেন। প্রতি বছরে এখানে নূন্যতম ১০০০ টাকা রাখা যেতে পারবে। সর্বোচ্চ সীমা যদিও কিছু নেই। যতদিন না শিশুসন্তান সাবালক হচ্ছে, ততদিন অভিভাবকরা তার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন। ১৮ বছর বয়স হলে সেই পেনশন অ্যাকাউন্টটি মেজর এনপিএস অ্যাকাউন্টে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
এনপিএস বাৎসল্য আদতে শিশুদের জন্য তাদের অবসর পরিকল্পনা, লিকুইডিটি বা লগ্নির ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘমেয়াদি ফিনান্সিয়াল সিকিউরিটি প্রোডাক্ট। এক্ষেত্রে শিশুসন্তানের জন্য একটি চজঅঘ (পার্মানেন্ট রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর) ইস্যু করা হবে, যা তার অ্যাকাউন্টের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হিসাবে কাজ করবে। এর ‘কম্পাউন্ডিং’ বৈশিষ্ট্যের কারণে অবসরকালীন সময়ে সেই সন্তানের অ্যাকাউন্টে ভালো অঙ্কের একটি অর্থরাশি জমা হবে, যা তাকে একটি স্বচ্ছ্বল জীবনযাপনে সাহায্য করবে।আশেপাশে যা যা আউটডোর অ্যাক্টিভিটি করতে পারেন বর্তমানে যে এনপিএস অ্যাকাউন্টগুলো রয়েছে তাতে আয়কর ছাড়ের সুবিধা ছাড়াও থাকছে ইল্ড ১০ থেকে ১২ শতাংশ। এটি আদতে একটি পেনশন কাম সেভিংস স্কিম, যা সন্তান সাবালক হলে নিয়মিত এনপিএস টিয়ার ওয়ান অ্যাকাউন্টে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ডিউরেশন: ১৮ বছর।
ফান্ড প্রোজেকশন-
১. অ্যানুয়াল কন্ট্রিবিউশন: ১০০০ টাকা।২. ইনভেস্টমেন্ট৩. এক্সপেক্টেড কর্পাস অ্যাট ১৮ ইয়ার্স অফ চাইল্ড: ৫ লক্ষ টাকা যদি রেট অফ রিটার্ন থাকে ১০ শতাংশ।৪. এক্সপেক্টেড কর্পাস অ্যাট এজ ৬০ ইয়ার্স: ২.৭৫ কোটি টাকা ১০ শতাংশ আরওআর-এ।৫. শিক্ষাগত কারণ, নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থতা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক ইন পিরিয়ডের পর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ উইথড্র করা যাবে অর্থাৎ তুলে নেওয়া যাবে। সর্বোচ্চ তিন বার ফান্ড উইথড্র করা যাবে।৬. এর মধ্যে যদি শিশুসন্তানটির দুর্ভাগ্যবশত মৃত্যু হয়, সম্পূর্ণ কর্পাস অভিভাবকদের কাছে ফিরে যাবে।৭. যদি কর্পাসের অর্থরাশি ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, ৮০ শতাংশ কর্পাস অ্যানুইটি ক্রয়ে ব্যবহার করা যাবে এবং ২০ শতাংশ লাম্পসাম হিসাবে তুলে নেওয়া যাবে। যদি অর্থরাশি ২.৫ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে পুরোটাই লাম্পসাম হিসাবে তুলে নেওয়া যাবে।
এনপিএস বাৎসল্য অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগবে-ক) শিশুসন্তানের জন্মের প্রশংসাপত্র।খ) স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট।গ) প্যান এবং পাসপোর্ট, এছাড়াও অভিভাবকদের কেওয়াইসি করাতে হবে, আইডেন্টিটি প্রুফ ও ঠিকানা জমা দিয়ে (এক্ষেত্রে লাগবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি বা ঘজঊএঅ জব কার্ডের মধ্যে কোনও একটি)।
যদি অভিভাবক প্রবাসী ভারতীয় হন, তাহলে সন্তানের জন্য লাগবে ঘজঊ/ঘজঈ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট (একক বা জয়েন্ট)। বর্তমানে অবসরকালীন সমস্যার সমাধানের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি কারণ, এর সঙ্গে ভবিষ্যতের জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো জড়িয়ে গিয়েছে অঙ্গাঙ্গীভাবে। কাজেই সেদিকে তাকিয়ে বলা যেতে পারে, এই নতুন, অভিনব ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্টটির গুরুত্ব সত্যিই অপরিসীম।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য