লাদাখে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হোক না কেন, যদি তেমন কিছু ঘটে, তাহলে অবশ্যই তার মোকাবেলা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। শুক্রবার এই বার্তা দিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই লাদাখের ভারত-চীন সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধানও সেকথা স্বীকার করেছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই আশা, শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের অবসান ঘটবে।এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সুকনা মিলিটারি স্টেশন থেকে সেনা কমান্ডারদের সম্মেলনে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে জানান, সংশ্লিষ্ট সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, লাদাখ ইস্যু নিয়ে ভারত অত্যন্ত 'সতর্ক এবং আশাবাদী'।
একইসঙ্গে রাজনাথ সকলকে মনে করিয়ে দেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তেই জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা সকল মানুষকেই প্রভাবিত করছে।
ওই কর্মকর্তার দাবি, এদিনের এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হয়ে রাজনাথ বার্তা দেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের কৌশল বদলে যাচ্ছে। তা ক্রমশ আধুনিক হয়ে উঠছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমেই তা স্পষ্ট।
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমাদের অবশ্যই এই ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আপনারা সতর্ক থাকুন, নিয়মিত আধুনিকীকরণ করুন এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য সর্বদা নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।'
উল্লেখ্য, গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে পূর্ব লাদাখের ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে রাজনাথের এদিনের বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, এদিনের এই সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছিল গ্যাংটকে। বস্তুত, এই প্রথম ভারত-চীন সীমান্তের এত কাছে এই ধরনের কোনো সম্মেলনের আয়োজন করা হলো। কথা ছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সশরীরে ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
কিন্তু, আবহাওয়া খারাপ থাকায় এদিন গ্যাংটক পৌঁছতে পারেনি রাজনাথ। ফলত, তিনি সুকনা থেকেই ভার্চুয়ালি গ্যাংটকের ওই সম্মেলনে যোগ দেন।
সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'প্রতিরক্ষা কূটনীতি, প্রতিরক্ষায় স্বদেশী প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যভিত্তিক রণকৌশল, প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীর আধুনিকীকরণ নিয়ে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। যুদ্ধের প্রস্তুতি একটি অবিচ্ছিন্ন ঘটনা হওয়া উচিত এবং আমাদের সর্বদা যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।'
চীনের সাথে পাল্লা দিতে ভারতের নতুন কৌশল: ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সরকার আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে চীনের সাথে পাল্লা দিতে এবার নতুন কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে পরিণত করতে নিজেদের তুলে ধরছে তারা। প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাড়াচ্ছে বিনিয়োগ ও সহায়তা।
ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্য দেশকে প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা দিতে সক্ষম একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বের নজর কাড়ার চেষ্টা করছে।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
২০২২ সালে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কাকে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছিল ভারত।
চীনের সাথে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের। চলতি বছর ভুটানে সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করেছে মোদি সরকার। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারে।
মোদির এই কৌশলের সবশেষ সুবিধাভোগী দেশ মালদ্বীপ। গেল বছর দ্বীপরাষ্ট্রটি থেকে ভারতের একটি ছোট সামরিক দল প্রত্যাহার করার দাবিতে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু।
তবে এসব ঘটনা ভুলে গেল সোমবার (৭ অক্টোবর) দিল্লিতে একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে গিয়েছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। উদ্দেশ্য ছিল, তার সরকারকে চরম আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাড়ে ৭ শ’ মিলিয়ন ডলারেও বেশি ভারতীয় সহায়তা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে অনেকটা সফল ও হয়েছেন তিনি।
চীনের আগ্রাসী চাপের মুখে এই অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে প্রভাব হ্রাস পেয়েছে ভারতের। গত এক বছরে অন্তত তিনটি দেশে ভারতপ্রীতি রয়েছে এমন নেতাদের হয় ভোটে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে, না হয় বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও অন্যান্য প্রতিবেশী যখন করোনা মহামারীর আগের সময়ের অর্থনীতির স্তরে ফিরে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে, ভারতের অর্থনীতি তখন প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে দেশটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, এই সবই চীনকে মোকাবেলার করার কৌশল হিসেবে করছে ভারত।
সূত্র: এএফপি
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য