-->

ইসরাইল-ইরান যুদ্ধের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরাইল-ইরান যুদ্ধের আশঙ্কা

ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশ ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বারনিয়ার এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বেয়ারবক ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ার এক টুইটবার্তায় এক পোস্টে, “নিকট ভবিষ্যতে যে কোনো সময়ে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা এবং পরিস্থিতি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথক এক পোস্টে অ্যানেলিনা বেয়ারবক বলেন, “মঙ্গলবার রাতে যে হামলা ঘটল, তা মধ্যপ্রাচ্যকে অতল গহ্বরের দিকে নিয়ে যাবে।

গত প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকে লেবাননে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। প্রথম পর্যায়ে কয়েক দিন ইসরায়েলের বিমান বাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, এতে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন।

এই পর্বের শেষ পর্যায়ে লেবাননে হিজবুল্লাহর সদরদপ্তরে আঘাত হানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সে হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী।

স্থলবাহিনী অভিযান শুরুর পর ওই রাতেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি এক বার্তায় জানিয়েছেন, “ইরানের হামলার জবাব দেওয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে, ঠিক সময়ে সেটির বাস্তবায়ন করা হবে।”

এদিকে, আইআরজিসির এক কর্মকর্তা ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সিকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে এই অপারেশন চালানো হয়েছে। জায়নবাদী গোষ্ঠী যদি ইরানের অপারেশনের প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের পরবর্তী হামলা আরও বিধ্বংসী হবে।”

মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরশত্রু দেশ ইরান এবং ইসরায়েল। দশকের পর দশক ধরে বৈরিতা চললেও চলতি ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত কোনো দেশই পরস্পরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি।

২০২৪ সালে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেবার প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছুড়েছিল আইআরজিসি।

চলমান পরিস্থিতিতে ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা অনেকটাই বেশি এবং তুরস্কসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে সতর্ক করেছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।

গতকাল শুক্রবার ইস্তাম্বুলে এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে ফিদান বলেন, ‘ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধকে একটি উচ্চ সম্ভাব্য হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। তবে এটি এমন কোনো ব্যাপক বিষয় নয়, যা আমরা চাই। এ অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের বিস্তার এবং অস্থিতিশীলতার সঞ্চার আমরা কামনা করি না’।

তুরস্ক কোনোভাবেই ইরানের সঙ্গে এমন কোনো সংঘাতকে সমর্থন করে না, যা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করে ফিদান বলেন, ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার থাকলে সেই অধিকার প্রয়োগ করা তার নিজস্ব ব্যাপার।

এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহতের দাবির বিষয়ে ফিদান বলেন, আঙ্কারা হামাস থেকে একটি নিশ্চিতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে, যদিও বিষয়টি হামাস প্রত্যাখ্যান করেনি।

তিনি গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘একটি উন্মুক্ত কবরস্থান’ হিসাবে বর্ণনা করেন, যেখানে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন।

ফিদান আরও বলেন, তুরস্কের মূল্যায়ন অনুসারে ইসরাইল তার মুখোমুখি হওয়া হুমকিগুলোকে একে একে নির্মূল করার জন্য একটি সামরিক কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। যার মধ্যে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা অন্তর্ভুক্ত।

পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিষয়ে ফিদান জোর দিয়ে বলেন, তুরস্ক বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সহযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং এটি কেউ লাভজনক মনে করে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য পিকেকে-র সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

আঙ্কারা-এথেন্স সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে ফিদান উল্লেখ করেন যে, তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একটি প্রক্রিয়া চলছে এবং উভয় পক্ষই উত্তেজনা কমাতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রক্রিয়া উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক ফলাফল বয়ে আনবে।

ন্যাটো প্রসঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনি ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে তুরস্ককে দুর্বল করতে পারবেন না।

একই সঙ্ঘে তিনি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এবং সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং ন্যাটোর প্রসঙ্গে আরও প্রগতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তুরস্কের ব্রিকসে যোগদানের আগ্রহ সম্পর্কে ফিদান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের প্রসারে ব্রিকসে আগ্রহ বাড়ছে। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।

আক্রমণ চালালে ইসরাইলকে শোচনীয় জবাব দেওয়া হবে: ইরান:ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি সতর্ক করে বলেছেন, যদি ইরানের বিরুদ্ধে আর কোনো আগ্রাসন চালায় তাহলে ইসরাইলকে শোচনীয় জবাব দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার লেবাননে নিহত আইআরজিসি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নীলফরৌশানের জানাজায় বক্তৃতাকালে মেজর জেনারেল সালামি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইল ভুলভাবে ভেবেছিল হানিয়া, নাসরুল্লাহ এবং নীলফরৌশানকে হত্যা করে ইরান এবং তার মিত্রদের সমস্যা সৃষ্টি করবে। কিন্তু অপারেশন ট্রু প্রমিস টু এবং ইসরাইলের আয়রন ডোমের মধ্য দিয়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের অনুপ্রবেশ তাদের সমীকরণকে বদলে দিয়েছে’।

আইআরজিসি প্রধান বলেছেন, ‘শত্রুদের সচেতন হওয়া উচিত যে ইরানের উপর যেকোন আক্রমণের শােচনীয় জবাব দেওয়া হবে। অপারেশন ট্রু প্রমিস টু সম্পূর্ণরূপে আমাদের প্রতিরক্ষামূলক সর্বোচ্চ শক্তি ছিল না। এটি স্রেফ শুধুমাত্র একটি সতর্কতা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘ইসরাইল মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জবাব পাবে। আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি যে আমরা শত্রুর দুর্বলতাগুলো জানি এবং আমরা তার দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করতে সক্ষম।’

মিত্রগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা এবং কমান্ডারদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইসরাইল যদি মনে পার পেয়ে যাবে, এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আইআরজিসি প্রধান।

বৃহস্পতিবার মধ্য ইরানের ইসফাহান শহরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নীলফরৌশান জানাজা শেষে এক অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠানে কালো পোশাক পরে মিছিলে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি বিমান হামলায় বৈরুতে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে নিহত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নীলফরৌশান। ১৭ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহর ওপর পেজার হামলার পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি দূতের সঙ্গে হিজবুল্লাহ প্রধানকে ইরানে চলে যেতে অনুরোধ করে একটি বার্তা পাঠান।

লেবাননে খামেনির সেই বার্তাবাহক ছিলেন আব্বাস নীলফরৌশান। ইসরাইলি বোমা যখন আঘাত হানে নাসরাল্লাহর সঙ্গে তিনিও তখন বাঙ্কারে ছিলেন এবং নিহত হন।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version