ইসরায়েলের সিজারিয়া শহরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে। শনিবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের উত্তরে সিজারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাসভবনে লেবানন থেকে উড়ে আসা একটি ড্রোন ওই আঘাত হানে বলে তাঁর মুখপাত্র জানান। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিজারিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উড়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী সেখানে ছিলেন না। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিজারিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উড়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী সেখানে ছিলেন না। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।এর আগে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগে ‘একটি অবকাঠামোতে’ যে ড্রোন হামলার খবর জানিয়েছিল, সেটি নেতানিয়াহুর বাসভবন কি না, তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, আজ লেবানন থেকে ইসরায়েল অভিমুখে তিনটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিহত করেছে তারা।
লেবানন থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া হয়েছে। এ সময় অঞ্চলটিতে হামলার সতর্কসংকেত বেজে ওঠে।
ইতিমধ্যে লেবানন কর্তৃপক্ষ বলেছে, আজ বৈরুতের উত্তরে জুনিয়েহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। গত বছর ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হওয়ার পর এটি ওই এলাকায় হওয়া প্রথম হামলার ঘটনা।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, জুনিয়েহতে একটি গাড়ির ওপর ‘ইসরায়েলি শত্রুপক্ষের হামলা’ হয়েছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কে এ হামলা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলছে ইসরায়েলের সংঘাত। গত মাসে লেবানন সীমান্তে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর আঞ্চলিক পরিচালনা কেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
হিজবুল্লাহও বলেছে, তারা ইসরায়েলের হাইফা ও এর উত্তরের শহরগুলো লক্ষ্য করে কয়েকটি রকেট হামলা চালিয়েছে।
পরে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানায়, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের হাদেরা শহরের পূর্বে একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা।
এছাড়া ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, শুক্রবার রাতে লেবানন থেকে ছোড়া অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ভূখণ্ড অতিক্রম করেছে। এদের মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং বেশ কিছু খোলা মাঠে পড়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা:লেবাননের হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা শুক্রবার ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দেশটির একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা কেন্দ্রীয় ইসরায়েলের হাদেরার শহরের পূর্বে অবস্থিত একটি বিমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে বিস্ফোরক-বোঝাই ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। লেবাননের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এবং হাসান নাসরাল্লাহকে উৎসর্গ করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৮০ জন। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওই এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
আল আওদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সালহা বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রায় ৭০ জনকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা হিমসিম খাচ্ছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। তারা জাবালিয়ায় সর্বশেষ হামলায় আহত হয়েছে।
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীকে প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গাজায় যদি আগ্রাসন বন্ধ না হয়, ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করা না হলে এবং ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া না হলে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে কমপক্ষে ৪২ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৯ হাজার ৫৪৬ জন।
গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর এখন লেবাননেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করছে ইসরায়েল। লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা চালানো হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য