ইউক্রেনের কুপিয়ানস্ক শহরের বাসিন্দা ইউলিয়া বাইবাক আরেকটি রুশ বিমান হামলার ভয় সহ্য করতে না পেরে তার বাবা-মাকে অবরুদ্ধ শহর থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। গত বৃহস্পতিবার তার মাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে গাড়িতে তোলার সময় তিনি বলেন, আমি (বাবা-মার কাছে) পুরো সাদা হয়ে কাঁদছিলাম ও ভয়ে কাঁপছিলাম। বললাম, আমরা এখান থেকে না গেলে তারা আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে।'
বাইবাক ও তার পরিবারসহ কুপিয়ানস্ক ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের এই কৌশলগত শহরে হামলা তীব্র করেছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের ছয় মাস পর কুপিয়ানস্ক পুনর্দখল করেছিল। তবে সম্প্রতি রুশ বাহিনীর আক্রমণ বাড়তে থাকায় শহরটি ক্রমাগত হামলার শিকার হচ্ছে। এরই মধ্যে, দক্ষিণে ডনেস্ক অঞ্চলে গ্রাম থেকে গ্রামে অগ্রসর হয়ে ক্রেমলিনের সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলোতেও হুমকি সৃষ্টি করছে।
কুপিয়ানস্কের বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাশিয়ার নিয়মিত হামলার কারণে তারা রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাচ্ছেন। শহরটি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী খারকিভ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।
খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ এই সপ্তাহে ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে বলেন, রুশ সেনারা শহরের সীমানা থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তিনি জানান, ক্রমাগত রুশ গোলাবর্ষণের কারণে স্থানীয় বিদ্যুৎ, তাপ ও পানির সরবরাহ মেরামত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার খারকিভে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়েহুবভ বলেন, অস্কিল নদীর বাম তীর থেকে পুরো বেসামরিক জনসংখ্যা, প্রায় ৪ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
গত বসন্তে ফিরে আসার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো কুপিয়ানস্ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৯০ বছর বয়সী হান্না জোরিনাকে। তিনি বলেন, প্রথমে পরিস্থিতি সহনীয় মনে হচ্ছিল। তারপর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় মনে হয় এই শেষ, আর কিছু নাই।
ইউক্রেইন যুদ্ধে লড়তে রাশিয়ায় সেনা পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া: দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার ১,৫০০ সেনা এরই মধ্যে রাশিয়ায় পৌঁছেছে। এই সেনাদেরকে রুশ নৌবাহিনীর জাহাজে করে রাশিয়ার বন্দর নগরী ভ্লাদিভোস্তকে নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেইন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর হয়ে লড়ার জন্য রাশিয়ায় সেনা পাঠাতে শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে। বিষয়টিকে ‘গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি’ বলে সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একদিন আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বলেছিলেন, তার বিশ্বাস- ১০ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা যুদ্ধে যোগ দিতে পারে। তার এই বক্তব্যের পরই দক্ষিণ কোরিয়া এমন খবর জানাল।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএস) শুক্রবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ১,৫০০ সেনা এরই মধ্যে রাশিয়ায় পৌঁছেছে। ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার বিশেষ অভিযান পরিচালনা বাহিনীর এই সেনাদেরকে রুশ নৌবাহিনীর জাহাজে করে রাশিয়ার বন্দর নগরী ভ্লাদিভোস্তকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার আরও সেনা শিগগিরই রাশিয়ায় পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে এনআইএস। এই সেনা সংখ্যা শেষ পর্যন্ত মোট ১২ হাজারের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র।
এনআইএস আরও জানায়, রাশিয়ায় পাঠানো উত্তর কোরীয় সেনাদেরকে রুশ সেনাবাহিনীর সেনাদের ইউনিফর্ম ও অস্ত্র দেওয়া হয়েছে এবং পরিচিতি পত্রও করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে রাখা হয়েছে রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্তক এবং অন্যান্য স্থান যেমন: উসুরিয়াক, খাবারোভোস্ক এবং ব্লাগোচেনস্ক এর সামরিক ঘাঁটিতে। প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেলেই এই সেনাদেরকে ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে।
উত্তর কোরিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, এমন আলামত বাড়তে থাকার মধ্যে এবার রাশিয়ায় পিয়ংইয়ংয়ের সেনাও পাঠানোর খবর এল।
সম্প্রতি কয়েকমাসে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা অনেক বেশি বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছায় তাকে ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর’ বলে সম্বোধন করেন।
দুই দেশের এই সখ্যতার মধ্যে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানোর খবর সামনে আসার পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল শুক্রবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ‘হাতে থাকা সবরকম পন্থায়’ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য