মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ভর করছে হাতে-গোনা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ওপর। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ নভেম্বর তাদের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে ভোট দিবেন। ভোটের এক সপ্তাহের কম সময় বাকি থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাদের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারেননি। মার্কিন সংবিধানের অধীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব ভোট রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটর (নির্বাচক) থাকেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো- যিনি পপুলার ভোটে (সাধারণ নাগরিকদের ভোট) জিতবেন, তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন; সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যত কমই হোক না কেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে জয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। এবারের নির্বাচনে সাতটি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলোর মধ্যে উইসকনসিন, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও অ্যারিজোনা উল্লেখযোগ্য।
১. উইসকনসিন (১০টি ইলেকটোরাল ভোট): ২০১২ সালে উইসকনসিনে বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির ভোটের ব্যবধান ছিল সত্তর হাজার। ওই নির্বাচনে বারাক ওবামা ৫২.৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন আর মিট রমনি পেয়েছিলেন ৪৬.২ ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় অঙ্গরাজ্যটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সেখানে পরাজিত হতে হয়েছিল তাকে। ২০২০ সালের নির্বাচনের চিত্র ছিল স¤পূর্ণ ভিন্ন। ওই বছর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন জো বাইডেন। ট্রাম্প মনে করেন, উইসকনসিনে এইবার জয়লাভ করার সম্ভাবনা প্রবল। রিপাবলিকানদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় সম্মেলনও উইসকনসিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাইডেন যখন নির্বাচনী দৌড়ে ছিলেন, তখন উইসকনসিনে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু কমলা আসার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২. নেভাদা (ইলেকটোরাল ভোট ৬টি): নেভাদার জনসংখ্যা ২০২৩ সালের মধ্যে আনুমানিক ৩১ লাখের মতো। ২০১২, ২০১৬ ও ২০২০ এই তিনটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ডেমোক্রেটরা নেভাদায় বাজিমাত করেছিল। ছয়টি ইলেকটোরিয়াল এর মধ্যে ছয়টিই ডেমোক্রেটরা দখলে নিয়েছিল। পপুলার ভোটেও ডেমোক্রেটরা জয়ী হয়েছিল। নেভাদায় অভিবাসী ভোটারের সংখ্যাও অনেক। নেভাদায় অভিবাসী ভোটার প্রায় ২০% থেকে ২৫%। চার লাখ ৪২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের নেভাদায় মোট যোগ্য ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ।
৩. পেনসিলভানিয়া (ইলেকটোরাল ভোট ২০টি): পেনসিলভানিয়ায় মোট জনসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ (১৩০ মিলিয়ন)। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার আয়তন ৩ লাখ ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যটি গত তিনটি অর্থ্যাৎ, ২০১২, ২০১৬ ও ২০২০ এর নির্বাচনের দুটি ফলই ডেমোক্রেটরা নিজেদের করে নিয়েছিল। ২০১২ ও ২০২০ এ ডেমোক্রেটরা এখানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। পিটার্সবার্গ ও ফিলাডেলফিয়ার মতো ক্ষয়িষ্ণু শিল্পাঞ্চলের জন্য পরিচিত পেনসিলভানিয়া। কয়েক দশক ধরে অব্যাহতভাবে শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে সংকটে রয়েছে অঙ্গরাজ্যটি। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০টির মধ্যে ২০টি-ই জিতে বাজিমাত করেছিল।
৪. জর্জিয়া (১৬ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট): জর্জিয়ায় ২০১২ সালে মিট রমনী ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট জিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কুপোকাত করেছিলেন। আবার ২০১৬ তেও রিপাবলিকানরা তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু ২০২০-এ ডেমোক্রেটরা তা দখল করে। ২০২৪-এ রিপাবলিকানদের সম্ভাবনা বেশি।
৫. নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬ ইলেকটোরাল ভোট): এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির গভর্নর প্রার্থী একটি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ কারণে সেখানে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যেতে পারেন ট্রাম্প। নর্থ ক্যারোলাইনা রিপাবলিকানদের জন্য আর্শীবাদ। গত তিনটি নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনায় রিপাবলিকানরা ডেমোক্রেটদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে। ১৬টি ইলেকটোরাল এর মধ্যে গত তিনটি নির্বাচনে ১৫টি করে রিপাবলিকানরা জয়ী হয়েছে।
৬. মিশিগান (১৫টি ইলেকটোরাল ভোট): মিশিগান একসময় ডেমোক্রেটদের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে সেখানে পাশার দান উল্টে দেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে জো বাইডেন আবারও সেখানে রিপাবলিকানদের পরাজিত করেন। তার বড় সমর্থক ছিল বড় সড় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও ইউনিয়নভূক্ত শ্রমিকরা। এবার কমলা হ্যারিস মিশিগানের প্রায় দুই লাখ আরব-আমেরিকানের সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
৭. অ্যারিজোনা (১১টি ইলেকটোরাল ভোট): ২০২০ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন মাত্র ১০ হাজার ৪৫৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
এ বছরের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নারীর হাতে প্রেসিডেন্ট পদে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক জরিপে হ্যারিস সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, ট্রাম্পও প্রায় সমান জনপ্রিয়। এ যুদ্ধে সুইং স্টেটগুলোতে কে জয়লাভ করবে, তা-ই ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য