-->
শিরোনাম

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মরিয়া কমলা ও ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মরিয়া কমলা ও ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা জমে উঠেছে। আর মাত্র ৫ দিন পরই ভোট গ্রহণ। এ অবস্থায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন। চলছে শেষ সময়ের প্রচারণা। ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ কাউকে এক তিল ছাড় দিয়ে কথা বলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকানদের কাছে এবার নির্বাচনী আমেজটাও একটু অন্যরকম। রয়েছে নারী-পুরুষ সমীকরণও। দু’জনই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোকে টার্গেট করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি একে অন্যকে ঘায়েল করতে ছুড়ে দিচ্ছেন বাক্যবাণ। তবে বিভিন্ন জরিপে দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তার পাল্লা প্রায় সমান দেখা গেছে।

স্থানীয় সময় সোমবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানে প্রচারণায় অংশ নেন কমলা হ্যারিস। সেখানে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে ‘বিভেদ ও আতঙ্কের পাতা উল্টে দিতে’ বলেন। মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে তরুণদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। কমলা বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রজন্মকে ভালোবাসি। কারণ, এ প্রজন্ম পরিবর্তনের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুত।’ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি পৃথিবীকে রক্ষার আহ্বান জানান।

প্রচারণার এ উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন জরিপের দিকে চোখ রাখছে সচেতন মহল। কিন্তু এসব জরিপে বড় কোনো ব্যবধান চোখে পড়ছে না। কমলা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট নয়। মঙ্গলবার জরিপ সংস্থা ফাইভ থার্টি এইটের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে কমলা কিছুটা এগিয়ে আছেন। কমলা পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন; আর ট্রাম্পের সমর্থন ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

কার্যত পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, মিশিগান, আরিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাদা– দোদুল্যমান এ সাত অঙ্গরাজ্যই ভাগ্য গড়ে দেয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের। এগুলোকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যও বলা হয়। উইসকনসিনে দুই প্রার্থীর ব্যবধান দশমিক ১০ শতাংশও নয়। জরিপে এসব অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীই সমানে সমান দেখা গেছে।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে কয়েকটি জরিপের ফল তুলে ধরা হয়। এগুলোর কয়েকটিতে কমলা ও কয়েকটিতে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। গত রোববার প্রকাশিত এবিসি ও ইসসোসের জরিপে ৫১ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ট্রাম্পের ৪৭ শতাংশের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন কমলা। একই দিন সিবিসি ও ইউগোপ তাদের জরিপের ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, কমলা ও ট্রাম্পের ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্ট– যথাক্রমে ৫০ ও ৪৯ শতাংশ। সিএনএন ও এসএসআরএসের জরিপে কমলার চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। এ জরিপে ৪৮ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৭ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করেন। সিএনবিসির সাম্প্রতিক জরিপেও ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর আগে ট্রাম্প ২০১৬ সালে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি একজন নারী। মাঝে ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। এবার ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ নারী হলেও তিনি যে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারী হিসেবে কমালাই দ্বিতীয় প্রার্থী যিনি এ বছর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি ট্রাম্পকে হারিয়ে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের মুকুট নিজের মাথায় চড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হতে পারে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। তাইতো শেষ সময়ে এসে ওই রাজ্যগুলোর অনাগ্রহী ভোটারদের ভোট কুড়াতে মরিয়া কমালা ও ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প লাগামহীন ক্ষমতার পেছনে ছুটছেন বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তাঁর সবচেয়ে বড় নির্বাচনী সমাবেশে উপস্থিত লাখো জনতার সামনে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের কাছে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কমলার নির্বাচনী প্রচারশিবিরের হিসাব অনুযায়ী, সমাবেশে এসেছিলেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ।

ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে, ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের কাছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোটারদের সামনে তার কথিত ‘সমাপ্তি যুক্তি’ তুলে ধরছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ায় প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন। পেনসিলভেনিয়া হচ্ছে সাতটি অঙ্গরাজ্যের একটি, যেগুলো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।

উভয় প্রার্থীই আগামী চার বছরের এই নতুন মেয়াদে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুপযুক্ত বলে পরস্পরকে অবমূল্যায়ন করছেন। কয়েক দশকের মধ্যে এই যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে যেসকল ভোটাররা এখনও ঠিক করেননি কাকে ভোট দেবেন, তাদের কাছে ভোটের সুবিধা চাইছেন উভয় প্রতিপক্ষ।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই সমান অবস্থানে রয়েছেন কিংবা খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন অথবা পিছিয়ে আছেন। তবে এর সবটুকুই সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব। এতে ভুল হতে পারে। এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের প্রত্যেকটিতেই কয়েক হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশন ল্যাব জানিয়েছে যে, আগামী মঙ্গলবারের আগেই প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ লোক ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কিংবা ডাক মারফত আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে সাড়ে ১৫ কোটি লোক ভোট দেন।

পেনসিলভেনিয়ার অ্যালেনটাউনের দিকে যাওয়ার আগে ট্রাম্প সমুদ্রপারে ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগোতে বক্তব্য রাখেন। তিনি হ্যারিসকে ‘মারাত্মকভাবে অযোগ্য, সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক’ বলে বর্ণনা করেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সরাসরি জাতীয় ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না বরং ইলেক্টোরাল কলেজ তা নির্ধারণ করে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের হিসেবে এই প্রতিযোগিতা হয়; ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টি তাদের রাজ্যে বিজয়ীকে, হ্যারিস কিংবা ট্রাম্প, যিনিই হোন সব ইলেক্টোরাল ভোট প্রদান করে। নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্য দুটি তাদের রাজ্যের ও কংগ্রেসানাল ডিস্ট্রিক্টের ভোট প্রদান করে। প্রত্যেক রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট তাদের মোট জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। প্রেসিডেন্ট পদে জয় লাভ করতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন পড়ে।

অন্যদিকে জর্জিয়ার আটলান্টায় সমাবেশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি কমলা ও তাঁর সমর্থকদের কঠোর সমালোচনা করেন। সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকে ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। জর্জিয়ায় ট্রাম্প বলেন, কমলা নতুন ধারা নিয়েছেন। তাঁর প্রচারণা হলো– কেউ ভোট না দিলে তিনি তাকে নাৎসি বলে সম্বোধন করেন।

গত সপ্তাহে কমলা সাবেক জেনারেল জন কেলির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে থাকাকালে জার্মান স্বৈরাচার অ্যাডলফ হিটলারের প্রতি নাৎসি জেনারেলদের আনুগত্যের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। কার্যত কেলি ছিলেন ট্রাম্পের মেয়াদে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও মন্তব্য করেন। আটলান্টার সমাবেশে কমলাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ উল্লেখ করে ট্রাম্প নিজেকে ‘নাৎসি নন’ বলে জানান।

ট্রাম্প জিতবেন, বলছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ:যুক্তরাষ্ট্রের ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয় পাবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফ ব্যারাউদ। বিশ্বের ‘সবচেয়ে নির্ভুল’ অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ব্যারাউদ কয়েকটি মানদণ্ডের বিচারে এ পূর্বাভাস দিয়েছেন। এক্সে ব্যারাউদ লেখেন, বিভিন্ন সূচক লক্ষ্য করে, যেমন– বেটিং বাজার, ভোট, নির্বাচনী মডেলারদের পূর্বাভাস, আর্থিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প জিতছেন।

কমলার জন্য মাঠে বুশকন্যা বারবারা:রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মেয়ে বারবারা বুশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি পেনসিলভানিয়ায় সপ্তাহের বেশি সময় কাটান। বারবারা বলেন, তাঁর প্রত্যাশা, কমলা নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেবেন এবং নারী অধিকার সুরক্ষা করবেন।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version