পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তি চেয়ে এবং দেশটির বৃহত্তর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আরেকটি চিঠি লিখেছেন মার্কিন কংগ্রেসের ৪৬ সদস্য। চিঠিতে পাকিস্তানে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এবং সরকারি সংস্থাগুলো পিটিআইকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
কংগ্রেস সদস্যরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন। তাঁর ব্যাপক গ্রেপ্তার, অবৈধ আটক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিধিনিষেধের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে ইমরান খানকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বর্ণনা করে তাঁকে অবৈধভাবে আটকে রাখার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে ইমরান খান ছাড়াও ইয়াসমিন রশিদ, শাহ মাহমুদ কোরেশির মতো পিটিআইয়ের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক রাখার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।কংগ্রেস সদস্যরা ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের নীতি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ইমরান খানসহ রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানিয়ে আরেকটি চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধশতাধিক আইনপ্রণেতা।
২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এরপর পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। বর্তমানে তাঁকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে রাখা হয়েছে।
সামরিক নাকি বেসামরিক আদালতে বিচার করা হবে, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি। দ্য ডন জানিয়েছে, ইমরান খানের বিচার নিয়ে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগের মুখে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি একটি চিঠি দিয়েছেন। লেবার পার্টির এক সদস্য বরাবর লেখা ওই চিঠিতে ল্যামি বলেছেন, ইমরান খানকে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে, এমন কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।গত শনিবার পিটিআই নেতা সায়েদ জুলফি বুখারি ওই চিঠি জনসমক্ষে এনেছেন। তিনি ডনকে বলেছেন, ল্যামির এ চিঠি ইঙ্গিত দেয়, কোনো বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারে সামরিক আদালত থাকতে পারে না, এমন বিষয়কে মূল্য দেয় যুক্তরাজ্য সরকার।
১১ নভেম্বর লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা কিম জনসনকে লেখা চিঠিতে ল্যামি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিচারপ্রক্রিয়া তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু আমরা খুব স্পষ্ট বলেছি যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে তাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সুষ্ঠু বিচার, যথাযথ প্রক্রিয়া এবং মানবিক আটকের অধিকার।’ ল্যামি আরও বলেন, এটা ইমরান খানসহ সব পাকিস্তানি নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য।গত মাসে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দলের ২০ এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামির কাছে ইমরানের মুক্তিতে ব্যবস্থা নিতে চাপ দেওয়ার জন্য চিঠি লেখেন। লিভারপুল রিভারসাইডের এমপি কিম জনসনসহ কয়েকজন এমপি মিলে ক্যাবিনেট মন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে লেখা চিঠিতে যুক্তি দেন, ইমরানকে আটক রাখার কোনো আইনি ভিত্তি নেই এবং তাঁকে আটক মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য