বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং ভারতের বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ ও তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মার্কিন প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সৌরশক্তি প্রকল্পের বরাত নিতে আদানি গ্রুপ ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছিল। এই প্রকল্প থেকে আগামী ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফার সম্ভাবনা ছিল।
নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের প্রসিকিউটরদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ শুধু ঘুষ দিয়েই থেমে থাকেনি; বরং এই বিষয়ে বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকের কাছে মিথ্যা তথ্যও প্রদান করেছে। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এই দুর্নীতির ঘটনাগুলো ধামাচাপা দিতে আদানি গ্রুপ ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ তোলে।
আদানির বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে। আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একদিনেই ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আদানি গ্রিন এনার্জি, যার শেয়ারের দাম ১৮.৭৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে আদানি গ্রুপের শেয়ার বাজারমূল্য একদিনে ২৮০০ কোটি মার্কিন ডলার কমে গেছে।
এর আগেও আদানি গ্রুপ কর্পোরেট কেলেঙ্কারির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিল। ২০২৩ সালে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার কারসাজি ও হিসাবরক্ষণ জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। ওই ঘটনার পর এক সপ্তাহে আদানির সম্পদমূল্য প্রায় ২৫০০ কোটি ডলার কমে গিয়েছিল।
ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সংসদীয় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে।" তিনি সেবি (ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড) কর্তৃক আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ উৎস খতিয়ে না দেখার জন্য সমালোচনা করেন।
গুজরাটের আহমেদাবাদে জন্ম নেওয়া গৌতম আদানি ১৬ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে রত্ন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে নিজের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। কয়লা, বিমানবন্দর, সিমেন্ট এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে তার ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়েছে।
আদানির পক্ষ থেকে মার্কিন মামলার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে গ্রুপটি মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগকে "নিছক অনুমান" বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে আদানি গ্রুপের সাম্প্রতিক এই দুর্নীতি মামলা ভারতীয় ব্যবসার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘুষ কেলেঙ্কারি ও শেয়ার বাজারে ধসের ফলে আদানি গ্রুপের দীর্ঘমেয়াদি সুনাম ও বাজারমূল্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য