শুরুতেই ট্রাম্পের ‘ওভারট্রাম্প’

নিখিল মানখিন
শুরুতেই ট্রাম্পের ‘ওভারট্রাম্প’

নতুন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদে প্রবেশ করতে চলেছে বিশ্ব। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই বেশকিছু আলোচিত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে এমনই ইঙ্গিত দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকা নিজের দেড় হাজার নেতাকর্মীকে মুক্তির আদেশের মধ্য দিয়েই তিনি নির্বাহী আদেশ শুরু করেন। ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ’ নিরাপদ ও নিশ্চিত করাটাই তার মূল লক্ষ্য বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই বাতিল করা হয়েছে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেশটি। বাতিল হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও তুলেছেন ট্রাম্প। মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। এর বিপরীতে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সময় গত সোমবার দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই তিনি বেশ কিছু আলোচিত নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেন।

সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা : ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘সমস্ত অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে’ এবং লক্ষাধিক ‘অবৈধ অভিবাসীকে’ ফেরত পাঠানো হবে। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকেই অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন ট্রাম্প।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়া : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া শুরু করতে ট্রাম্প সোমবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাটি কোভিড-১৯ মহামারি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংকটের সময় ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, ডব্লিউএইচও ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অসঙ্গত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’ এড়িয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে এখন থেকে যারা অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দেবেন, তাদের সন্তান আর মার্কিন নাগরিকত্ব পাবেন না। তবে, যদি বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ আমেরিকান নাগরিক হন, তাহলে সন্তান জন্মের পরেই মার্কিন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

এ নির্বাহী আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার যেহেতু দেশের সংবিধানে নির্ধারিত, তাই তার এই পদক্ষেপ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ : ট্রাম্প সীমান্ত বন্ধ করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তে অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার, মানব পাচার এবং অপরাধ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ : অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ ফের শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সীমান্ত প্রাচীর তোলার নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন।

অভিবাসন নীতি পরিবর্তন : ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের একটি অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করেছেন। ওই নীতি কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ৩০,০০০ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন এই নীতি সীমান্তে অবৈধ পারাপার বন্ধের লক্ষ্যে চালু করেছিল।

মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালু করা : ট্রাম্প মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালুর একটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধে জড়িত কোনো অবৈধ অভিবাসী এবং আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা খুনে দোষী সাব্যস্ত যে কারও ওপর এটি প্রযোজ্য হবে।

নির্বাসন : ট্রাম্প ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ পদ্ধতি বন্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন; যা অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শুনানি পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিত। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন’ অভিযান শুরুর কথা ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন।

নতুন সংস্থা ‘ডজ’ এবং ইলন মাস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডজ)’ নামে একটি নতুন পরামর্শদাতা সংস্থা গঠনের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই সংস্থা সরকারি খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক এই সংস্থার নেতৃত্বে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ফেডারেল নিয়োগে স্থগিতাদেশ : ট্রাম্প একটি আদেশে সই করে নতুন ফেডারেল নিয়োগ স্থগিত করেছেন। তবে, মার্কিন সামরিক বাহিনীসহ আরও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য নয় - ততদিন পর্যন্ত যতদিন না ট্রাম্প প্রশাসন সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ব করছে।

আমেরিকা সর্বাগ্রে : ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেছেন এবং বিভিন্ন বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি পুনপর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই উদ্যোগকে নতুন ‘আমেরিকা সর্বাগ্রে’ পররাষ্ট্র নীতির অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরোনোর আদেশ সই : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গতকারী দেশকে এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক লড়াই প্রচেষ্টা থেকে সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প।

জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা : ট্রাম্প জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং কৌশলগত তেল মজুদ পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি নির্বাহী আদেশে, তিনি আলাস্কার তেলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘ড্রিল, বেবি, ড্রিল’ নীতির আওতায় আমেরিকার জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানো হবে।

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গাবাজদের ক্ষমা : চার বছর আগে যে স্থাপনায় কট্টর সমর্থকদের হামলার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প, সেই ক্যাপিটল হিলেই শপথগ্রহণের পরপর ওই দাঙ্গাবাজদের ক্ষমা করলেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্যাপিটল দাঙ্গার প্রায় ১,৬০০ জনকে ক্ষমার আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনেককে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক পুনরায় চালু রাখা, পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাবিরোধী আদেশ, মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, পানামা খাল ফেরত, সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধে পদক্ষেপ, রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ, বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজের সুবিধা বাতিল, ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল, বিদেশি পণ্যের আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধিসহ কয়েক ডজন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প।

সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রবেশ করতে চলছে বিশ্ব : দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে’ বেশকিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, শপথ নেওয়ার আগেই ট্রাম্প তার প্রতিবেশী দেশ কানাডাকেও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি সপ্তাহ দুয়েক আগে কানাডাকে মার্কিন ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন একটি মানচিত্রও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডকে পর্যন্ত কিনে নিতে চেয়েছেন তিনি। আবার মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে ‘আমেরিকান উপসাগর’ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প।

এমন পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রবেশ করতে চলছে বিশ্ব। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক ভাষণ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার বদলে পুরোনো ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরেছে। তার ভাষণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, নিজের দেশের স্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সদ্য শপথ নেওয়া এই প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি নতুন ভূখণ্ড অধিগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন; এমনকি মঙ্গলগ্রহেও।

ইকোনমিস্টের মতে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, উইলিয়াম ম্যাককিনলে একজন ‘মহান প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ম্যাককিনলে ১৮৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ও পানামা খাল নির্মাণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী। তিনি মনে করেন, খালটির মালিকানা নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে ও এটি বর্তমানে চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের ভাষণে সবচেয়ে চমকপ্রদ মন্তব্য ছিল, আমরা পানামা খাল পুনরায় দখল করতে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায় কিছুই করা হচ্ছে না, অথচ বিদেশি সীমান্ত রক্ষায় অগণিত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

পানামা খালের চুক্তি ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় সম্পাদিত হয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল নেতা ও সাধারণ নাগরিক এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে খালটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত আরও রক্ষণশীল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে, ট্রাম্প শুধু পানামা খালের পুনরুদ্ধারের কথাই বলেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও তুলেছেন। ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলের আমলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। হাওয়াই, কিউবা ও ফিলিপাইনের মতো অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ব্যাপকভাবে বাড়ে। এমনকি ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহেও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা স্থাপন করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। মঙ্গলে মার্কিন পতাকা স্থাপনকে তিনি তার দেশের ‘স্পষ্ট ভবিতব্য’ বলে উল্লেখ করেন।

তবে বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা ও ইউক্রেন যুদ্ধ। কিন্তু ট্রাম্প তার ভাষণে চীনের প্রসঙ্গ তুলেছেন কেবল পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তিনি কেবল গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। আর তার অভিষেক ভাষণে ইউক্রেন প্রসঙ্গ একেবারেই উপেক্ষিত ছিল।

শুল্কের বিষয়েও ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ম্যাককিনলের সঙ্গে মিলে যায়। ম্যাককিনলে ১৮৯৭ সালে ডিংলে অ্যাক্ট স্বাক্ষর করেন; যা শুল্ক ৫০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যায়। ট্রাম্পও একইভাবে শুল্ককে ব্যবহার করে বিদেশি অর্থ থেকে জাতীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করার কথা বলেন।

ম্যাককিনলের মতোই ট্রাম্প বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছেন। তার অভিষেক অনুষ্ঠানে জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক ও মার্ক জাকারবার্গের মতো বিলিয়নিয়ারদের জন্য বিশেষ আসনের ব্যবস্থা ছিল। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি ‘স্বর্ণযুগে’ প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তবে তার কার্যক্রমের দিকে তাকালে মনে হয়, তিনি ‘গিল্ডেড যুগে’ ফিরে যেতে চান।

১৮৭০ দশকের শেষ থেকে ১৮৯০ দশকের শেষের সময়কালকে যুক্তরাষ্ট্রের গিল্ডেড যুগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। যদিও অনেকের মতে এটি এমন একটি যুগ, যার কোনো নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। ওই যুগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী পরিবারগুলো ব্যাপক হারে সম্পদ সঞ্চয় করেছিল। শিল্প বিপ্লব থেকে লাভ, রেলপথ নির্মাণ, নগরায়ণ, ওয়াল স্ট্রিট ও ব্যাংকিং শিল্পের উত্থান, গৃহযুদ্ধ ও পুনর্গঠন থেকে আর্থিক লাভ, ইস্পাত উৎপাদন ও নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হয়েছিল মার্কিন অর্থনীতি।

মন্তব্য